রাজাপুর গ্রাম পুরুষ শুন্য গাংনীতে পুলিশ আহত’র ঘটনায় চার”শ গ্রামবাসির বিরুদ্ধে মামলা

রাজাপুর গ্রাম পুরুষ শুন্য গাংনীতে পুলিশ আহত’র ঘটনায় চার”শ গ্রামবাসির বিরুদ্ধে মামলা

gagni mapআমাদের মেহেরপুর ডট কম ঃ মেহেরপুরের গাংনীতে ২ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় বুধবার রাজাপুর গ্রামের এজাহার নামীয় ৩৬জনসহ ৩/৪শ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে গাংনী থানা পুলিশ। এএসআই মোস্তাজাব বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে স্থানীয় কুমারীডাঙ্গা ক্যাম্প পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগ করেছে গ্রামবাসি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামের নারী পুরুষের উপর লাঠিচার্জের ঘটনায় গ্রামবাসিরা পুলিশকে ঘেরাও করে। এসময় খলিসাকুন্ডি গ্রামের লোকজন পুলিশের পক্ষ নিয়ে রাজাপুর গ্রামে হামলা চালানোর সময় ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়। অপরদিকে পুলিশের কনস্টেবল আরিফের হামলায় ৩ মহিলাসহ আহত হয় ৬ জন। ঘটনার পরপরই কনষ্টেবল আরিফকে ক্লোজ করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নী এএসআই মোস্তাজাবের বিরুদ্ধে । এদিকে গ্রামবাসির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় গ্রামটিতে পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানান- এই ঘটনার পিছনে গ্রামবাসী পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন গেলে কুমারীডাঙ্গা গ্রামের ইলিয়াস উদ্দিন (৫০) ও রাজাপুর গ্রামের মুনির উদ্দিন (৪৫) সহ গ্রামবাসীরা জানান- মটমুড়া ইউনিয়নের কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এএসআই মোস্তাজাব ও সিপাই আরিফুর রহমান প্রায়ই জামায়াত, বিএনপি লিষ্টে নাম আছে হুমকী দিয়ে গ্রামের নীরিহ ব্যাক্তিদেরকে আটকসহ মারধর ও পরে অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দিত। এছাড়াও ব্যাবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। দোকান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে দাম না দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন বাড়ি থেকে হাঁস মুরগী এবং জ্বালানী বিনা টাকায় নিয়ে যেতো।এর প্রতিবাদ করলে তারা নানা ধরণের হুমকি দেয়া ছাড়াও সন্ত্রাসী অভিযোগ এনে টাকা আদায় করতো। মহিলাদেরও গাল মন্দ করা হতো।
সোমবার রাতে রাজাপুর গ্রামের আলমগীরের জমির পাট ক্ষেতের মাথা কেটে নিয়ে যায় চোরেরা। এতে খলিসাকুন্ডি গ্রামের জনৈক চাষীর মরিচ ক্ষেত নষ্ট হলে এর জন্য দায়ি করা হয় আলমগীর ও রাজাপুর গ্রামবাসিকে। এনিয়ে উভয় গ্রামের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ দেখা দেয়। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে খলিসাকুন্ডি গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক লাঠিয়াল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশের সহায়তায় রাজাপুর গ্রামের হামলা চালায়। এসময় তারা গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঢুকে নারী পুরষের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। কনষ্টেবল আরিফের হামলায় কয়েকজন মহিলা আহত হলে ফুঁসে উঠে গ্রামবাসি পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করে । এসময় খলিসাকুন্ডি গ্রামের লোকজনের উপর আক্রমন চালানোর সময় ২ পুলিশ আহত হয়। পুলিশ আহতর ঘটনায় রাজাপুর গ্রামবাসিকে দায়ি করে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধা জিন্নাতুন্নেছা জানান, পুলিশ যখন তখন গ্রামের লোকজনকে নানা অভিযোগে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে।রাতের বেলা বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে থাকে। গভীর রাতে পুলিশরা এসে দোকানে মালামাল নেয়ার কথা বলে ডেকে তোলে। উঠতে দেরী হলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। গ্রামের মর্জিনা খাতুন জানান, তার ছেলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী অভিযোগ এনে তার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করেছে।
কনস্টেবল আরিফের লাঠির আঘাতে আহত মোবারক হোসেনের স্ত্রী শাহানারা খাতুন, রমজান আলীর স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ও কাবাতুল্লাহর স্ত্রী লাইলী খাতুন জানান, ঘটনার দিন পুলিশ আমাদের শুধু নির্যাতনই করেনি অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছে।
গ্রামের প্রতিবন্ধি শামীমা আখতার জানান, পুলিশ ও খলিসাকুন্ডি গ্রামের লোকজন যেভাবে মেয়েদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে তা বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। বৃদ্ধ এমদাদুল হক, ইউনুস ও দলীল উদ্দিন জানান, খলিসাকুন্ডি গ্রামের লোকজন পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে। গাংনী থানার ওসি মাসুদুল আলম জানান- পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় কুমারীডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ মুসতাজাব বাদী হয়ে গাংনী থানায় মামলা করেছে।
মেহেরপুর সংবাদ