যে কোন মূল্যে নির্বাচন প্রতিহত করুন (তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা)

যে কোন মূল্যে নির্বাচন প্রতিহত করুন (তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা)

5644_tarনির্বাচন প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে তিনি দলের নেতাকর্মীদের  যে কোন মূল্যে নির্বাচন প্রতিহত করার আহবান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি। ভিডিও বার্তায় তারেক রহমান বলেন, আমাদের দেশ আজ গভীর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত। আপনারা ভাল আছেন- এ কথা যেন নিছকই শুধু আনুষ্ঠানিকতা। মতপ্রকাশে সরকারি হস্তক্ষেপ হয়রানি দমন-পীড়ন এবং জনমনে সর্বোপরি অশান্তি এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে, আমি আশঙ্কা করি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই আজ আন্তরিকভাবে বলতে পারেন না যে আমরা ভাল আছি। তিনি বলেন, নানা পালাবদল থাকলেও রাজনীতি হচ্ছে মৌলিকভাবে মানুষ কেন্দ্রিক। আমি আপনি আপনারা আমাদের সকলের রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে। রাজনীতির সঙ্গে আমরা কেউ সরাসরি যুক্ত বা কেউ সংগঠন বা আদর্শকে সমর্থন করি। আমাদের সবারই নিজেদের মতো করে রাজনৈতিক মতামত আছে। হতে পারে সেই মতামতগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্বতন্ত্র। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আমাদের সবার মাঝে যে মিলটি রয়েছেÑ তা হচ্ছে আমাদের চিন্তা ও চেতনায় রয়েছে এই দেশ ও দেশের মানুষ। তারেক রহমান বলেন, দেশের কল্যাণের উপায় নিয়ে আমাদের নিজেদের মাঝে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। কিন্তু দেশের অস্তিত্ব নিয়ে ভিন্ন মত থাকতে পারে না। আজ অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যÑ চলমান রাজনীতিতে যেন দেশের এই অস্তিত্বকে ঘিরেই বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের যে সংজ্ঞা আমরা চিরকাল জেনেছি, ক্ষুদ্র একটি রাজনৈতিক জনসমষ্টি নিজেদের স্বার্থে আজ সেই সংজ্ঞাকে বদলে ফেলছে। প্রতিবেশী যে রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হতে পারে স্বাভাবিক, ভিত্তি হতে পারে পারস্পরিক মঙ্গল ও সমঝোতার। সেই সম্পর্ককে ব্যক্তিগত ও সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে সেই রাজনৈতিক জনসমষ্টি আজ জনমতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পালাবদলেই এক সময়ে আজকের এই জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। ক্ষমতায় যাওয়ার সেই প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা সেই প্রক্রিয়াকে মেনে নিয়ে বিরোধী দলে গিয়েছিলাম। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেশের সম্পদের অভূতপূর্ব লুটপাট, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বর ন্যক্কারজনক বিনাশ, আর রাজনৈতিক-বিরোধী ও সমালোচকদের নজিরবিহীন দমনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, তাদের ক্ষমতা লাভের সেই প্রক্রিয়া প্রকৃতপক্ষেই কলঙ্কজনক ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জুড়ে আজ চলছে এক গভীর রাজনৈতিক সংকট। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে দেশের মানুষ। জনসমর্থন ও আত্মবিশ্বাস শূন্যের কোটায় পৌঁছানো আওয়ামী লীগ সরকার গণমানুষের ইচ্ছাকে তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা, রাজনৈতিক গুম-খুন, সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের গণহত্যা, আর দুর্নীতির স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সব অভিযোগের মুখে মানুষ প্রতিটি পদে-পদে এ সরকারের ওপর অনাস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপি প্রার্থীদের ব্যাপক বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অবস্থান-দুটোকেই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, এর ফলে সৃষ্ট অচল অবস্থার মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবে আজ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। নির্বাচনকালীন যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকার ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। ৬ জন সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল। সেই ব্যবস্থার প্রতি আজ তাদের কেন এত অনীহা। সেই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেই ক্ষ্যান্ত না হয়ে একের পর এক গণহত্যা চালাচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম করেছে। অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন ও গ্রেপ্তার চালাচ্ছে। তারেক রহমান বলেন, পুরো  দেশ  যেন আজ একটি কারাগার। যেখানে জান-মালের নিরাপত্তা নেই; আছে কেবল ভীতি ও আতঙ্ক। নিরপেক্ষ নির্বাচনে অপমানজনক পরাজয় আর গণহত্যা-নৈরাজ্য-দুর্নীতি-অপশাসন সৃষ্টির দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ভয় থেকেই কি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের এই অবস্থান?  দেশবাসীর চাওয়া-পাওয়া, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, এসবের কি  কোনই মূল্য নেই? আওয়ামী লীগ কি আবারও চূড়ান্তভাবে সেই বাকশালে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে; যেখানে ভিন্নমত, ভিন্ন আদর্শ আর সমালোচনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা হত্যা করা হতো? বাকশালের পরিণতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হওয়া এদেশের জন্য, এদেশের মানুষের জন্য, এমনকি আওয়ামী লীগের জন্যও তা ভাল ফল বয়ে আনেনি। আমাদের সবার রাজনীতি যেহেতু দেশের কল্যাণার্থেই হওয়া উচিত, তাই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে যাত্রা না করে কেন আমরা আবার সেই অরাজক অতীতে ফিরে যাব? তিনি বলেন, ২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি। অভিযোগ করা হয়েছিল যে বিচারপতি  কেএম হাসান বিএনপিপন্থি। অথচ আজ যে শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হতে চাচ্ছেন, তিনি কেবল অনিরেপক্ষই নন, খোদ আওয়ামী লীগের প্রধান। কোন ভরসায়, কিসের ভিত্তিতে- বিএনপি বা অন্য যে কোন দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে? সংবিধান তো ঐশী বাণী নয় যে এটিকে পরিবর্তন করা যাবে না। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের মতো আমিও প্রশ্ন করতে চাই: সংবিধানের জন্য জনগণ, নাকি জনগণের জন্য সংবিধান? জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে এ পর্যন্ত ১৫ বার আমাদের সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের সংবিধানে যদি ৯৮ বার সংশোধন এসে থাকে, তাহলে জনগণের চাওয়া অনুযায়ী, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে, আমরা কেন ষোড়শ সংশোধনী করতে পারব না? তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি অসাংবিধানিক বলে সরকার এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটিই যদি তাদের যুক্ত হয় তাহলে আমাদের সংবিধানে একটি সংশোধনও  করা সম্ভব হতো না। পরে থাকতাম ১৯৭২ -এর গণআকাক্সক্ষা বিরোধী সংবিধানে। আওয়ামী লীগ যা বলেছে তা কোন যুক্তির কথা নয়। বরং সংসদের দুই তৃতীয়াংশ আসনের আশীর্বাদ নিয়ে দেশকে অভিশাপের দিকে ঠেলে দেয়ার অপপ্রয়াস মাত্র।  তিনি বলেন, সরকার ১৮ দলীয় জোটসহ সকল বিরোধী দলকে সংসদের বাইরে রেখে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে। অথচ দেশে-বিদেশে নানা জরিপ ও পর্যালোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, দেশে শতকরা ৯০ ভাগ  মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ। তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের    স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নৈমিত্তিক নাগরিক অনুষ্ঠান সংবিধান বিশেষজ্ঞদের আলোচনা আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের প্রতিবেদন ও বহির্বিশ্বের কূটনৈতিকের ভাষ্য সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেসব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যম একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এখন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এর ওপরই নির্ভর করছে আমাদের গণতন্ত্রের চর্চা ও সর্ববৃহৎ অধিকার তথা ভোট প্রদানের ভবিষ্যৎ। অথচ এরই মাঝে সরকার পরিকল্পিতভাবে একটি প্রহসনের নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। যেখানে অর্ধেকের বেশি আসনে ইতিমধ্যে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোট প্রদান ছাড়াই নির্বাচিত হয়ে গেছেন ১৫০ জনেরও অধিক সরকার সমর্থক প্রার্থী। বাকি যেসব আসন রয়েছে সেখানেও নাম সর্বস্ব কিছু প্রার্থীর কারণে জনগণ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎসÑ সংবিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি।  আর সেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ আজ এমন একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছে যে নির্বাচনে একে তো কোন মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ নেই, উপরন্তু প্রার্থীহীনতার ফলে দেশের অর্ধেকের  বেশি ভোটার চাইলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। ১৬ কোটি মানুষের এদেশের আওয়ামী লীগকে মুক্তিকামী জনতা এমনভাবেই প্রত্যাখ্যান ও ধিক্কার জানালো যে তারা শতচেষ্টা করেও একতরফা নির্বাচন ৩০০টি আসন এমনটি অর্ধেক আসনেও কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করাতে পারেনি। এদেশের হতভাগ্য জনসাধারণকে পাঁচ বছর অন্তর ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র অনুশীলনের একমাত্র সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে তারা। গণতন্ত্রের সহ¯্রাধিক বছরের ইতিহাসে শতাধিক দেশে রাজনৈতিক পটভূমি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্বের ইতিহাসে এমন প্রতারণামূল নির্বাচন এর আগে কখনও ঘটেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা যারা গণতন্ত্রের মূলনীতিতে বিশ্বাস করি আজ সময় এসেছে সবার এক হয়ে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিরোধ, প্রতিহত ও  বর্জন করা। ব্যক্তিস্বার্থে নয় দলীয় স্বার্থে নয় এটি করতে হবে দেশের স্বার্থে দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে, দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয় শান্তি চান। আর সেই শান্তির পূর্ব শর্ত হলো- দেশের মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে পাতানো নির্বাচনের খেলা বন্ধ করা। তারেক রহমান বলেন, আমি আহ্বান জানাবো আসুন সূচনা করি নতুন বাংলাদেশের। স্বভাবতই বিশ্বের একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে সম্ভাবনাময়  এবং সমৃদ্ধ আগামীতে পৌঁছানোর পূর্ব শর্ত একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা। যেখানে মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে, গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চা থাকবে। বাংলাদেশের গত ৪২ বছরের ইতিহাসে প্রমাণ করেছে যে এই ভূখণ্ডের  মানুষ শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্রমনা। তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তা উপলব্ধি করেছিলেন বলেই রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও বহুপথের পরিবর্তে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল তখন তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে আবারও স্বৈরাচার মাথচাড়া দিয়ে উঠলে বর্তমানে গৃহবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছি। দেশের জনগণ সেই গণতন্ত্রকে স্বাগত জানিয়েছে। এবং দশকের পর দশক তা লালিত হয়েছে প্রবল আবেগ ও অনুভূতির সংমিশ্রণে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় ঐক্যজোট দেশব্যাপী আন্দোলন করছে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে আমাদের যে আন্দোলন তাতে অনেক  নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তাদের উৎসর্গের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য হলেও আমাদের গ্রামে-গ্রামে শহরে-শহরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনে শহীদ সকল ব্যক্তির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। কথা দিচ্ছি তাদের আত্মত্যাগকে আমরা বৃথা যেতে দেবো না। ইনশাআল্লাহ এদেশে আমরা আবারও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। নিশ্চিত করবো উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। বয়ে আনবো আর্থিক ও সামাজিক অগ্রগতি। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই- তারা আমাদের মতো দেশের মাটিতে রাজনীতি করছেন। এদেশের মানুষের মতামত ও তাদের বক্তব্য উপলব্ধি করা আপনাদের রাজনীতির স্বার্থেই অবশ্যই এটা করণীয়। ভেবে দেখুন দেশের সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে পদে পদে আমাদের প্রাণপ্রিয় ইসলাম ও ধমীর্য় সম্প্রীতিতে রক্তাক্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো গণদাবিকে ধূলিসাৎ করে এমন লজ্জাজনক নির্বাচন কি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দলকে মানায়। এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের ঘৃণা ও অভিশাপ ছাড়া আর কি অর্জিত হবে।  তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার স্বপেক্ষর দাবিদার হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে আপনাদের স্থায়িত্ব নির্ভর করে অন্য একটি রাষ্ট্রের নীতির প্রতি।  যেখানে সরকার দেশবাসীর প্রতি পরাধীনতার শৃঙ্খল চাপিয়ে দেয়। সেই রাজনীতি আপনারা কি করে মেনে নেন। এ কেমন রাজনীতির সমর্থন। দেশের গভীর সঙ্কটেও দলীয় আনুগত্যকে জাতীয় স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দিয়ে দেশের মানুষের ওপর নৃশংসতা চালায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- এর পরিণাম শুভ হয় না। তিনি বলেন,  পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ব্যক্তিদের মনে রাখতে হবে যে আপনারা গণপ্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের কর্মী। দেশের পরিস্থিতি বা সরকারের থাকা দলের উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা যাই হোক আপনারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। আপনাদের চালক আর আপনাদের বিবেক আর আপনাদের চাকরিদাতা এই দেশের খেটে-খাওয়া মানুষ। যাদের কষ্টার্জিত অর্থে আপনাদের সংস্থান হয়। মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতনে আপনাদের অনেকেরই অংশগ্রহণ রয়েছে। আপনাদের পরিবার-পরিজনরাই তা মেনে নিতে পারছেন না। তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থার শিগগিরই নিরসন হবে। আজ যারা গণবিরোধী কাজ করতে প্রণোদনা দিচ্ছেন গণমানুষের চাপে যাদের অবশ্যম্ভাবী পতন ঘটবে তখন জনতার কাঠগড়ায় সেইসব অপরাধীদের পাশাপাশি আপনাদেরও দাঁড়াতে হবে।  তবে তা হবে অত্যন্ত লজ্জার ও কলঙ্কের। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে পরিমাণ সেনা কর্মকর্তা আমরা হারাইনি তার চেয়ে বেশি সংখ্যক সেনা কর্মকর্তাকে তাদের পরিবার-পরিজনসহ হত্যা নির্যাতন লাঞ্ছিত করা হলো আমাদের রাজধানীর বুকে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ অবদান রাখা আমাদের সেনাবাহিনী দেশের ভেতরে যেভাবে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অশান্তি ও রক্তপাতের শিকার হয়েছে তা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এত প্রতিষ্ঠানের মাঝে দেশের বিডিআর ও সেনাবাহিনীকে আওয়ামী লীগের প্রথম ও প্রচণ্ড ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হলো তা স্বাধীনতাকামী ও সার্বভৌমত্বকামী বাংলাদেশীদের কাছে সহজে বোধগম্য। তিনি বলেন, কৃষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী , শিক্ষার্থী, শ্রমিক, গৃহিণী তথা সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলছি, দেশের রাজনীতিতে আজকের দুটি পক্ষ বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগ নয়। ১৮ দলীয় জোট বনাম মহাজোট নয়। বরং গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্র। বাংলাদেশের পক্ষে শক্তি বনাম অন্য দেশের পক্ষের শক্তি। গণমানুষের আকাক্সক্ষা বনাম ব্যক্তি বিলাশের ক্ষমতার অভিলাষ। দেশবাসীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আমি বিশ্বাস করি আপনারা প্রত্যেকে একেকজন রাজনীতি সচেতন নাগরিক। দেশকে নিয়ে আপনাদের চিন্তা চেতনা আমাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। পরিস্থিতির বিচারে আপনাদের কোন পক্ষ অবলম্বন  করা উচিত তা আপনাদের সিদ্ধান্ত।   তিনি বলেন, যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে আপনারা সবাই বিশ্বাস করেন সেই ব্যবস্থার পক্ষেই আমাদের এত সংগ্রাম। তাই ওই সংগ্রাম আমাদের একার নয়। এটি আপনাদেরও সংগ্রাম । আমরা সবাই মিলে এই প্রহসনের নির্বাচন প্রতিরোধ ও বয়কট করবো কিনা তার ওপর নির্ভর করছে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক নাগিরিক হসেবে আমাদের অস্তিত্ব। তারেক রহমান ১৮ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি ও ১৮ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকের উদ্দেশ্যে বলছি- ইতিহাস ও রাজনীতির পালাবদল আমাদেরকে আজ এক অন্যরকম অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে আজ আমরা পরিণত হয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার  সেনানিতে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ সে­াগানের মর্মার্থ আজ  দেশবাসী পদে-পদে অনুভব করছে। উজ্জ্বল প্রভাতের পূর্বে রাত যেমন গভীর ও অন্ধকার হয়,  তেমনি আমাদের উপর নেমে এসেছে অন্য দেশের তাঁবেদারিতে নিমজ্জিত জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের গুম, খুন, মামলা, হামলা ও নির্যাতনের স্টিমরোলার। আজ আমাদের লড়াই  কোন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়। আজ আমাদের লড়াই একটি বন্দি জাতির মুক্তির জন্য এক অশুভ আশীর্বাদপুষ্ট স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে। সেই অশুভ তৎপরতাই একদিন আমাকে আপনাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছিল। আজও শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমি সশরীরে আপনাদের মাঝে উপস্থিত নেই। তবে আমি প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে আপনাদের মাঝেই অনুভব করি। আপনাদের ওপর আসা আঘাত, আপনাদের ত্যাগ, আপনাদের সংগ্রাম আমাকে সর্বদা আচ্ছন্ন করে রাখে। আপনাদের প্রতি আমি আহ্বান জানাই, এখন সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। আর নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা নয়। এখন থেকে লক্ষ্য একটাই- সকল ক্ষুদ্র বিভাজন ভুলে স্বৈরাচারী সরকার আর তার প্রহসনের নির্বাচনকে যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী আর অন্ধ সমর্থক ছাড়া প্রতিটি বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। কেউ সশরীরে আছেন; আর বাকিদের সমর্থন, প্রেরণা ও দোয়া আমাদের সঙ্গে আছে। দেশের মানুষ রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তির কামনায় চেয়ে আছেন বিএনপির দিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের দিকে। এত জনসমর্থিত একটি আন্দোলনের সাফল্য ইনশাল্লাহ অনিবার্য। প্রয়োজন শুধু এই সংগ্রামকে- যা চলে আসছে আমাদের বিপুল ত্যাগ-তিতিক্ষা, বহু সহযোদ্ধা ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষের প্রাণের মূল্যে-  সেই সংগ্রামকে, এই দেশ ও জাতির স্বার্থে যে কোন মূল্যে অব্যাহত রাখা। বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আজ সময়ের অন্যতম দাবি। সেই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি হবে রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য ও আপনাদের নতুন ধারা অংশগ্রহণ। আসুন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফল করে পরিবর্তনের রাজনীতির পথকে প্রশস্ত করি।

সুত্র ঃমানব জমিন
http://www.youtube.com/

বাংলাদেশ