মেহেরপুরে ৪ মাসে ১৩টি হত্যাকান্ড ১৪ ডাকাতি, ৫টি ছিনতাই ১৬টি সংঘর্ষ আইন শৃঙখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি

মেহেরপুরে ৪ মাসে ১৩টি হত্যাকান্ড ১৪ ডাকাতি, ৫টি ছিনতাই ১৬টি সংঘর্ষ আইন শৃঙখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি


map-2নয়ন আমদের মেহেরপুর ডট কম ঃ
মেহেরপুরে একেরপর এক হত্যাকান্ড সংঘর্ষ আর চুরি ডাকাতি ছিনতাই ও বোমাবাজির ঘটনায় জেলায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। এতে মেহেরপুর জেলাবাসী চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। চরমপন্থি ও রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশ বলেছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থির অবস্থা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।
বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মেহেরপুরের ৩ টি উপজেলায় গত ৫ জানুয়ারী থেকে ৫ মে পর্যন্ত ৪ মাসে ১৩ টি খুনের ঘটনা ছাড়াও ১৪ টি চুরি ডাকাতি ও ৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ, পারিবারিক কলহ ও জমি জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ১৬ টি সংঘর্ষের ঘটনায় জনগন আতংকিত হয়ে পড়েছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষও রাজনৈতিক নেতাদের কল্যাণে মামলা হামলায় জড়িয়ে পড়েছে। খোদ প্রশাসনের লোকজনও রেহায় পাচ্ছেন না বোমা হামলা থেকে।
জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারী গাংনী কলেজ পাড়ায় রোকাইয়া (২০) নামের এক কলেজ ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। ১৬ জানুয়ারী গাংনীর করমদি গ্রামে মন্টু (৩৪) নামের একজনকে গরু চোর সন্দেহে গ্রামবাসিদের গণপিটুনীতে নিহত হয়। ২০ জানুয়ারী মুজিবনগর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মোমিন (৪৫) নামের একজন কৃষক নিহত হয়। একই দিনে মেহেরপুর ফৌজদারী পাড়ায় মালা খাতুন (৩৫) নামের এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ জানুয়ারী মেহেরপুরের কাঁশারীপাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন পৌর সভার কাউন্সিলার ও আওয়ামীলীগ নেতা বিপুল (৪০)।
২১ মার্চ সন্ধ্যা রাতে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন মুজিবনগর রতনপুরের ডাঃ হেলাল (৪৫) ও তার মেয়ে মিতু (১৮)। সন্ত্রাসীরা ডাঃ হেলাল ও তার মেয়েকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে খুন করে। ৪ এপ্রিল গাংনীর হাড়িয়াদহ মাঠ থেকে অজ্ঞাত (২০) এক যুবতীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা তরুনীকে ধর্ষণ পূর্বক হত্যা করে লাশ পুতে রাখা হয়েছে। ১৯ এপ্রিল খুন হয় মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের শমসের আলম (৫৪)।
জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক সংঘর্ষে ২৩ এপ্রিল গাংনীর মিনাপাড়া গ্রামের মামুন (২৫) ও শিমুলতলা গ্রামের রুস্তুম (৫৫) নিহত হয়। ৩০ এপ্রিল পরোকীয়া প্রেমের জের ধরে গাংনীর শহড়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত একরাম আলীর ছেলে রুহুল আমিন (৪০)কে তার স্ত্রী ওষুধের সাথে বিষ পান করিয়ে হত্যা করে। সর্বশেষ খুনের ঘটনাটি ঘটে ৪ মে মেহেরপুর শহরে। লিচু খাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আকরাম (৪০) নামের এক যুবলীগ কর্মী নিহত হন।
এ সকল হত্যাকান্ড ছাড়াও একই সময়ে জেলায় ১৪টি সংঘর্ষ, ১২টি ডাকাতি ও ৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহার করা হচ্ছে শক্তিশালী বোমা। খোদ প্রশাসনের লোকজনও রেহায় পাচ্ছে না বোমা হামলা থেকে। ২২ এপ্রিল রাতে বেআইনী চরমপন্থি সংগঠন জনযুদ্ধের আঞ্চলিক নেতা জামসেদ আলী ওরফে জান্টু (৪৫) কে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ গ্রেফতারের প্রতিবাদে সন্ত্রাসীরা গাংনী থানা পুলিশের উপর বোমা হামলা করে ও আমতৈল গ্রামে লুটপাট চালায়।
একটি সুত্র জানায়, মেহেরপুর জেলায় চরমপন্থি সংগঠনের ক্যাডার ছাড়াও রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের আশীর্বাদে খুন ও রাহাজানির ঘটনা ঘটছে। পুলিশসহ অন্যান্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দলের মনোতুষ্টিতে নিয়োজিত থাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় চেষ্টা করে না। আজ পর্যন্ত একটি খুনেরও মোটিভ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে দিনদিন আইন শৃঙখলা পরিস্থিতি ক্রমশঃ অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এব্যাপারে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোফাজ্জেল হোসেন জানান, পুলিশ কারো মদদ পুস্ট নয়। পুলিশ ও র‌্যাব আন্তরিকভাবে আইন শৃঙখলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক চাপ ছাড়াও নানা সমস্যার কারণে খুনের মোটিভ উদ্ধার ছাড়াও খুনীদেরকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তার পরও আমরা প্রতিটি হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের আন্তরিকাতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি।
মেহেরপুর সংবাদ