পেটে খিদে রেখে প্রতিমার মুখে হাসি ফোটানো যায় না

পেটে খিদে রেখে প্রতিমার মুখে হাসি ফোটানো যায় না

IMG_0022এখন সেপ্টেম্বর। দূর্গাপূজার এখনও ঢের বাকি। অবশ্য সন-তারিখের হিসাব রাখতে রাজি নন শিল্পীরা। এখনও যুদ্ধকালীন কাজ শুরু হয়নি ঠিকই। কিন্তু মায়ের মূর্তিতে মাটি লেপার কাজ শুরু হয়ে গেছে মাস দেড়েক আগে। সমস্যা একটাই। প্রতিমাগড়া শিল্পীরা বহিরাগত। বিভিন্ন জেলায় তারা কাজের অর্ডার নিয়ে আগে-ভাগেই মাটি লেপার কাজ শেষ করেছে। একসপ্তাহ আগে তাদের শুরু হবে তাড়াহুড়ো। কারণ নির্ধারিত সময়ে কাজ তুলতে হবে। বর্তমানে প্রতিমা গড়ার কাজে কর্মির বড় অভাব। প্রতিমা শিল্পীদের আক্ষেপ আছে বর্তমান প্রজন্মের প্রতি। যেমন মেহেরপুরে এক সময় যথেষ্ট নাম ডাক ছিল কাশিনাথ রায়ের। তিনি নিজের হাতে প্রতিমা গড়ার কাজ শেখাতে চেয়েছিলেন ছেলে-মেয়েকে। কিন্তু কেউ এপথে এগোয়নি। নতুন প্রজন্ম আর মাটি রংয়ে হাত রাঙাতে চায় না। তারা চায় অন্যকোন উপায়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে। বাপ-ঠাকুরদার শিল্পীসত্তার পরম্পরা টিকিয়ে রাখার দায় তাদের নেই। প্রতিমা শিল্পী মেহেরপুরের কাশিনাথ রায়ের ছেলে বিশু নাথ মোটর সাইকেলের শোরুমে চাকুরি করে। বিশুনাথ রায় তর বাবাকে সাফ জানিয়ে দেয় মাটি মাখার কাজ তারা দ্বারা হবেনা। কাশিনাথের মেয়ে বছর দশক আগে ধর্মান্তরিত হয়ে এখন মুসলমান। তার অবস্থান এখন প্রতিমা নির্মাণের বিরুদ্ধে। মেহেরপুর শহরের ক্যাশব পাড়ার সম্ভু রায় এখন মেহেরপুরে প্রতিমা তৈরীর কাজ করেন। বাপ-ঠাকুরদার হাত ধরে কাজ শেখা এই প্রতিমা শিল্পীর নাম সম্ভু রায়। নতুন প্রজন্মের কাজে এমন অনিহা কেন ? প্রশ্নের জবাবে বলেন বাপ-ঠাকুরদার কাছে শিখেছি প্রতিমা গড়ার কাজ। এইকাজে বছরে একবার ডাক পড়ে। কি হবে এই কাজ করে? এর ভবিষৎইবা কী? তাই ছেলে মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করে। এই ব্যবসায় এখন ডাকপড়ে চারুকলা থেকে পাশ করা ভাস্করদের। কিন্তু ধর্মতো মানে না তাদের। ওইসব শিল্পীদের দিয়ে গড়া প্রতিমাকে গড়া যায়। কিন্তু সে প্রতিমাকে পূজা করা যায়না। এব্যাপারে ব্রাক্ষন নিপ্পন চক্রবর্তী বলেন যে প্রতিমাকে সনাতন ধর্মবলম্বীরা পূজা করবে সেই পূজা নির্মিত হতে হবে প্রকৃত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হাতে। কিন্তু এখন কেউ কেউ জাত পাত না মেনে প্রতিমা গড়িযে নিচ্ছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের হাতে। মেহেরপুরে এবার ৩৩টি স্থানে পূজা নির্মান হচ্ছে এই সময় পর্যন্ত। অধিকাংশ পূজা গড়ছে বহিরাগত পালেরা। বামনপাড়ায় পূজা মণ্ডপে কাজ করা মাগুড়ার প্রতিমা শিল্পী নারায়ন পাল বলেন এখন আর কাজের সঠিক মুজুরি পায়না। এবার ২৫টি পূজার অর্ডার নেয়া হয়েছে। এজন্য আগে-ভাগে মাটি লেপার কাজ শেষ করতে হয়েছে। মেহেরপুরের চাঁদবিল গ্রামের পালপাড়ার গোবিন্দ পাল সিংহের কেশরে এক আচড় দিয়ে বললেন ‘যেখানে সব জিনিষের দাম বাড়ছে, সেখানে পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ছে প্রতিমা তৈরীর উপকরণেরও। অথচ দাম বাড়ছে না তাদের কাজের। শুধু শিল্পী হিসাবে আত্মতুষ্টির দিন গিয়েছে। কারণ প্রতিমা তৈরীতে এখন লাভের মুখ দেখা দুস্কর। পেটে খিদে রেখে প্রতিমার মুখে হাসি ফোটানো যাবে আর কতদিন?
মেহেরপুর সংবাদ