আজ, শুক্রবার টাটা গোষ্ঠীর নতুন কর্ণধার হিসেবে রতন টাটার হাত থেকে ব্যাটন তুলে নিচ্ছেন সাইরাস মিস্ত্রি। শুক্রবার অবসর নিচ্ছেন রতন টাটা তখন প্রতিষ্ঠানটির আয় ১০ হাজার কোটি ডলার ছড়িয়ে গেছে
রতন টাটা সাইরাস মিস্ত্রি।
৭৫ বছর বয়সীএই শিল্পপতি জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় কাটিয়েছেন তিল তিল করে গড়ে তোলা নিজের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এর মধ্যে ১৯৯১ সাল থেকে ২১ বছর ধরে এই গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানটির পণ্যকে তিনি নিয়ে গেছেন এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে।
১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত টাটা গ্রুপকে তিনি যুগের উপযোগী একটি বৃহত্তর করপোরেট বাণিজ্যিক গ্রুপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশ্বের নামী-দামি ব্র্যান্ডের তালিকায় টাটা গ্রুপের অবস্থান ৪৫তম। তিনি একে একে টাটা বেভারেজ, টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, টাটা পাওয়ার, টাটা কেমিকেলস, ইন্ডিয়ান হোটেলস ও টাটা টেলিসার্ভিসেস নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল দিয়ে উন্নতির শিখরে নিয়ে যান।
সিঙ্গুর-কাণ্ডের সময় থেকে টাটা গোষ্ঠীর বর্তমান কর্ণধার রতন টাটার সঙ্গে ভারতের তৃণমূলনেত্রী মমতার সম্পর্কের অবনতির শুরু পরবর্তী সময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মমতার পরোক্ষ তুলনা টেনেছিলেন ‘গুড এম ব্যাড এম’ মন্তব্যে। তাঁর শেষ সাক্ষাৎকারেও সিঙ্গুর ছেড়ে আসার হতাশা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন টাটা।
টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জমশেদ টাটার দুই ছেলে হলেন স্যার দোরাব ও স্যার রতন টাটা। রতন ও তাঁর স্ত্রী নাবাজবাই নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁরা এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের সন্তান নাভাল টাটাকে দত্তক নিয়েছিলেন।রতনের বয়স যখন সাত বছর, তখন মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
বোম্বের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন রতন। এর পর শিমলার বিশপ কটন স্কুলে পড়েছেন। শেষ করেছেন ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কোনান স্কুল থেকে। ১৯৬২ সালে তিনি কর্নওয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক পাস করেন। ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে পড়াশোনা শেষ করেন। ১৯৬২ সালে টাটা গ্রুপে যোগ দেন।
১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত টাটা গ্রুপকে তিনি যুগের উপযোগী একটি বৃহত্তর করপোরেট বাণিজ্যিক গ্রুপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। টাটা গ্রুপের ২৮টি শিল্পে প্রায় তিন লাখ মানুষ কাজ করে। চিকিত্সা, বিজ্ঞান, গবেষণা, খেলাধুলা, সংস্কৃতিসহ নানা খাতে আরও ভালো কিছুর জন্য অর্থ দিয়ে থাকে টাটা গ্রুপ। এখন টাটার মোট আয়ের ৬৫ শতাংশই আসে দেশের বাইরে বাণিজ্য থেকে।
১৯৭১ তিনি ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির নির্বাহী পরিচালকের পদে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে টাটা ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।
ভারত সরকার ২০০৮ সালে রতন টাটাকে তাঁর অবদানের জন্য পদ্ম বিভূষণ পদকে ভূষিত করেন। ২০০৯ সালে রতন টাটাকে ব্রিটিশ নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। দেশ ও বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছেন।