মেহেরপুরে হরতালে পুলিশের গুলিতে নিহত জামায়াত কর্মী সোলাইমানের স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা

মেহেরপুরে হরতালে পুলিশের গুলিতে নিহত জামায়াত কর্মী সোলাইমানের স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা

Meherpur News Pic-2মেহেরপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত সোলাইমানের স্ত্রী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে এখন শোকের সাগরে ভাসছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে শহীদ হয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে দু’টি অবুঝ শিশু সন্তানকে নিয়ে কী করবেন আর কোথায় যাবেন তা ভেবে ভেবে দিশেহারা শিউলি খাতুন। সোলাইমান হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, তার অবুঝ সন্তান দু’টিকে যেন দেখে রাখা হয়। তার মতই যেন আল্লাভিরু হিসেবে গড়ে তোলা হয়। স্বামীর আদেশ কীভাবে পালন করবে তা ভেবে দিশেহারা তিনি। দিনমজুর সোলাইমানের নুন আনতে পানতা ফুরাতো। জমি- জায়গা বা সম্পদ বলতে তেমন কিছই নেই। কী দিয়ে কী করবে তা ভেবে পাগল প্রায় তিনি। মেহেরপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সৈয়দ আলী শেখের দিনমজুর ছেলে সোলাইমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতাল সফল করতে গিয়ে ১৩ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত ১৩ ও ১৪ আগষ্ট হরতালের ১ম দিনে হরতাল সফল করতে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সাথে সড়ক অবরোধ কর্মসূচীতে অংশ নেন। এদিন ভোর বেলা মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের আমঝুপি থেকে বারাদী বাজার পর্যন্ত ৬ কিলোমটিার সড়ক অবরোধ করে জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা। সকাল ৯টা পর্যন্ত রাস্তা আবরোধ করে মিছিল মিটিং করে। অবরোধ শেষে সোলাইমান সহ ৫০ জন কর্মী গ্রামের বাড়ী রঘুনাথপুরের দিকে যাচ্ছিল। ফেরার পথে রাজনগর গ্রামে পৌঁছালে পুলিশ তাদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। একটি গুলি সোলাইমানের পেটের ডান পাশে লেগে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। একই সময় আহত হয় আরও দশ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় সোলাইমানকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে তাকে রাজশাহী রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ দিন পর তিনি মারা যান। এদিকে সোলাইমানের মৃত্যুর খবর শুনে তার ফুফু হৃদ রোগে আক্রন্ত হয়ে পরদিন সকালে মারা যান। একই দিনে চার ঘন্টা ব্যবধানে তাদের দু’জনকে দাফন করা হয়।
সোলাইমানের স্ত্রী শিউলি খাতুন জানায়, ঘটনার দিন ভোর থেকেই তার মনটা ভাল বলছিল না। বার বার মনে টানছিল কিছু একটা অঘটন ঘটবে। স্বামী সোলাইমানকেও সে কথা জানায় সে। সে কথায় কান দেয় না সোলাইমান। বলে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন কায়েমের ডাকে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আল্লাহর সর্বভৌমত্ব বাতিলের সরকারী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে নিজ গ্রামের অন্যান্য কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিতে ছুটে যায় সে। এরপর যা হবার তাই হলো।
সোলাইমানের বড় ভাই কোরবান আলী ও এলাকাবাসী জানায়, চরম দারিদ্রতার মধ্যেও সোলাইমান ছিল সৎ ও সত্যবাদী। সে নিয়মিত নামাজ আদায় করতো। স্বল্প শিক্ষিত হলেও নিজে নূরানী কায়দায় কুরআন শিখে এলাকার অন্য মানুষকে শিক্ষা দিত। ইসলামী সংগঠনের কোন কাজে অবহেলা করতো না। সকল কর্মকান্ডে সময় মত উপস্থিত হতো।
পিতা সৈয়দ আলী শেখ বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে ভাল জানে। ৬টি সন্তানের মধ্যে সে ছিল সব চেয়ে ভাল এবং দায়িত্ববান। বৃদ্ধ পিতামাতাকে সে দেখাশুনা করত। কোন খাবার পিতা-মাতাকে আগে না দিয়ে খেতনা। সব ভাই-বোনদের সাথেই তার সুসম্পর্ক ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে ছলেমান ছিল সদালাপি ও মিষ্টভাষী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পিতার বাড়ির ভেতরেই এক কোনে বাঁশের চাটাইয়ের উপর টিনের চালা দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘর। সে ঘরেই স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতো সোলাইমান। সে ঘরটিতে এখনও সোলাইমানের শুন্যতা বিরাজ করছে।
দুই সন্তান আর বিধবা স্ত্রীকে সাহায্যের হাত বাড়াতে ইসলামী ব্যাংক, মেহেরপুর শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব নং ১৭৭৭৯ খোলা হয়েছে।
মেহেরপুর সংবাদ