মেহেরপুরের মুজিবনগরে পুলিশের গুলিতে এক জামায়াত কর্মী নিহত ৬ পুলিশ সহ আহত ১৩।।

মেহেরপুরের মুজিবনগরে পুলিশের গুলিতে এক জামায়াত কর্মী নিহত ৬ পুলিশ সহ আহত ১৩।।

Meherpur Aborod news Pic-2 (19-09-13)জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কাদের মোল্লার রায়ের প্রতিবাদে ও আটক কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতালের দ্বিতীয় দিনে মেহেরপুরে মুজিবনগর সড়কOLYMPUS DIGITAL CAMERA অবরোধকালে পুলিশের গুলিতে দেলোয়ার হোসেন (৩০) নামের এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও সাত জামায়াত ও শিবির কর্মী। এদিকে অবরোধকারীদের হামলায় মুজিবনগর থানার ওসি রবিউল হোসেন সহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে । বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের গৌরিনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ৩২ বর্ডার গার্ড MEHERPUR-1বাংলাদেশ-এর (বিজিবি) কুষ্টিয়া মিরপুর সেক্টরের উপ অধিনায়ক মেজর তারেক মাহমুদ সরকার এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিহত দেলোয়ার মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের সামসুদ্দোহার ছেলে। তিনি ৮ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। এক বছর আগে বাড়ি আসেন।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাMeherpur-P (5) (ওসি) রবিউল হোসেন, এসআই আব্দুল মান্নান, কনস্টেবল আব্দুল হালিম, খাইরুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম ও মিরুল আলীম। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় এসআই আব্দুল মান্নানকে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের ভর্তি করা হয়েছে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। আহত জামায়াত-শিবির কর্মীরা হলেন- আক্তারুজ্জামান, রাফিউল ইসলাম, সুমন আলী, সুলতান আহম্মেদ, মানিক, নোমান ও মোজাম্মেল হোসেন। এদের বাড়ি মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর, মোনাখালি ও বিদ্যাধরপুর গ্রামে। এরা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দিনের হরতাল সফল করতে জামায়াত ও শিবির কর্মীরা বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের গৌরিনগর, মেহেরপুর-কাথুলি সড়কের কায়েমকাটা মোড় সহ বিভিন্ন সড়কে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। রাজনগরে মহিলা জামায়াত কর্মীরা লাঠি মিছিল বের করে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মুজিবনগর থানা পুলিশ গৌরিনগরে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় অবরোধকারীরা পুলিশকে বলে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে এক ঘন্টা অবরোধ করে চলে যাবে। কিন্তু পুলিশ তাদের কথা না শুনে ছত্রভঙ্গ করতে তাদের উপর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অবরোধকারীরা ছয় পুলিশকে ঘিরে ফেলে পিটুনি দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালালে আট জামায়াত-শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। এদের মধ্যে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে কুষ্টিয়ার মধ্যে বেলা পৌনে এগারটার দিকে মারা যায় জামায়াত কর্মী দেলোয়ার। সেখান থেকে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়।
501মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম ছয় পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাব টহল দিচ্ছে।
এদিকে আহতদের গ্রেফতারের জন্য এদিন দুপুরে মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় দারুস সালাম ক্লিনিক থেকে ওটি ইনচার্জ শিমুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও জামায়াত-শিবির কর্মীদের আটক করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালায়।
এদিকে নিহত জামায়াত কর্মী দেলোয়ারের লাশ তার নিজ
গ্রামের বাড়ি মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামে দুপুর ২টার দিকে পৌছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে । তার বৃদ্ধ পিতামাতা নিহত সন্তানের লাশের দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন । নিহত দেলোয়ারের লাশ এক পলক দেখতে হাজার হাজার মানুষ দুর-দুরান্ত থেকে দেখতে আসেন । মিষ্টিভাষী স্বভাব সূলভ দেলোয়ারের লাশ দেখে চোখের পানি কেউই ধরে রাখতে পারেনি।

নিহতের পরিচয় ঃ পুলিশের গুলিতে নিহত জামায়াত কর্মী দেলোয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের পশিচম পাড়ার SANYO DIGITAL CAMERA
বাসিন্দা সামসুদ্দোহার ছেলে ৪ ভাই ও ১বোনের মধ্যে সে বড় । সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সে দীর্ঘ ৮ বছর সৌদি প্রবাসী জীবন কাটায়। সে বিদেশ থাকা অবস্থায় ছোট তিন ভাইকে সৌদি আরবে নিয়ে যায়। ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে দেশে ফিরে জামায়াতের রাজনিতীর সাথে সক্রিয় হন। নিহত দেলোয়ার প্রতিদিনের ন্যায় ফজরের নামাজ আদায় করে বের হয় হরতালের সমর্থনে মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য। মিছিলের পূর্ব মূহর্তেও দেলোয়ার জানত না সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু নির্মম নিয়তির কাছে হার মেনে তাকে ফিরতে হল লাশ হয়ে বাবা মায়ের কোলে। 
পুলিশের গুলিতে নিহত জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেনের লাশ SANYO DIGITAL CAMERAবৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টার সময় দারিয়াপুর হাইস্কুল মাঠে জানাযা শেষে দাফন করা হয়েছে। জানাযায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এদিকে মুজিবনগর সংঘর্ষে ওসি রবিউল হোসেন সহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত ও সদর উপজেলার বন্দর গ্রামে পুলিশের পিকআপে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মুজিবনগর ও সদর থানায় পৃথক মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুজ্জামান।
পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা এই পৃথক মামলায় জামায়াত শিবিরের অন্তঃত ২/৩ হাজার লোকের নামে মামলা হতে পারে বলে জানান এসপি নাহিদুজ্জামান।

এদিকে মুজিবনগর এলাকায় কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ র‌্যাবের পাশাপাশি বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে ।

মেহেরপুর সংবাদ