আমাদের মেহেরপুর ডট কম ঃ মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীনের শ্যালকের গোডাউনে মজুদ করা সাড়ে ৪হাজার বস্তা চাউল নিয়ে প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকার নিন্দা ও চাউল জব্দসহ ইসলাম আলীকে গ্রেফতারের দাবীতে মেহেরপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাংশ। রবিবার সকালে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফুয়ান আহমেদ রুপক ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল আলমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি হোটেল বাজার থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রদক্ষিন করে।
পরে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সরকারী চাউল জব্দ ও মজুদকারী কালো বাজারী সংসদ সদস্যের শ্যালক ইসলাম আলীকে গ্রেফতারের দাবী জানান তারা। এদিকে ইসলাম আলীর গোডাউনে তল্লশীকে কেন্দ্র করে দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েছেন পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন। তবে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্ত ব্যাক্তিরা। গত শনিবার বিকালে মেহেরপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মাসুদুর রহমান ও সদর থানা পুলিশের ওসি রিয়াজ উদ্দীন যৌথভাবে মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ১ আসনের সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীনের শ্যালক ইসলাম আলীর যাদুবপুর রোডের গোডাউন ২টিতে তল্লাশী চালিয়ে কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) ও টেষ্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ৫শ টন (প্রায় সাড়ে৪ হাজার বস্তা) চাল মজুদ মজুদের অস্তিত্ব পান মজুদকৃত এই চালের বাজারমূল্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। তবে, মালামাল জব্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন নিয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোফাজ্ঝেল হোসেন বলেছেন, গোডাউন ২ টিতে তল্লাশীকালে ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া সত্বেও না পাওয়ায় ওই মালামাল জব্দ না করেই ফিরে গেছে কর্তব্যরত পুলিশ। অন্যদিকে- জেলা প্রশাসক জানান- ইউএনও ব্যাস্ত থাকায় তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো যায়নি। তবে, অবৈধ মালামাল জব্দ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, স্থানীয় সাংসদ জয়নাল আবেদীনের শ্যালক ইসলাম আলীর গোডাউন দুটিতে অবৈধ চাল মজুদ রয়েছে এমন সংবাদের ভিত্ত্বিতেই তল্লাশী চালানো হয়েছে। দুপুর তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই অভিযান চলে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে মালামাল জব্দ করা যায়নি। তবে ভিন্ মত প্রকাশ করেছেন সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নাহিদা সুলতানা। তিনি জানান- কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর চাল যে কেউ কিনে তা মজুদ করতে পারেন। যা অপরাধ যোগ্য নই। তাই মালামাল জব্দ করা হয়নি। তবে কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচির মূল উদ্যেশ্যে ব্যাহত হবে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন জবাব দেননি। মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান জানান- স্থানীয় সাংসদের শ্যালক সরকারের শুরু থেকেই কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা ) ও টিআরের চাল জোর করে অবৈধভাবে অত্যন্ত কম দামে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কিনে আসছেন। আমরা বার বার সংসদ সদস্য কে বলার পরেও তা বন্ধ হয়নি। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর সরকারী চাল কেনা ও মজুদ করা সম্পূর্ণ বেআইনী। সাংসদ ও তাঁর শ্যালক ভুয়া প্রকল্প গ্রহন করে লাখ লাখ টাকার চাল মজুদ জোর করে স্থানীয় মেম্বর চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে মজুদ করেছে। এগুলো জুনের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য কাবিখার চাল। অথচ- সাংসদের চাপে প্রশাসন মালামাল জব্দ না করেই ফিরে গেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। গোডাউনের মালিক মেহেরপুর-১ আসনের সাংসদ জয়নাল আবেদীনের শ্যালক ইসলাম আলী জানান- আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা পুলিশ দিয়ে আমার গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। পুলিশ আমার গোডাউনে মজুদকরা চালের ক্রয়ের বৈধ কাগজ দেখতে চাইলে আমি তাদের দেখিয়েছি।। কাগজপত্র দেখে পুলিশ অবৈধ মজুদের প্রমান না পেয়ে চলে যান। তাছাড়া কাবিখার সরকারী চাল কেনা ও মজুত করা অবৈধ নই।