কলকাতায় রবিবার ঘটে গেল রুদ্ধশ্বাস এক নাটক যা ভারতের ইতিহাসে বিরল। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাসভবনে আচমকা হানা দেয়। তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি রক্ষীরা। ঘটনাস্থলে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজীবের বাসায় মিটিং করেন। আর তারপরেই মাঝ রাস্তায় সংবাদ সম্মেলন করেন।
‘এই ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে আমি ধরনায় বসব এখনই বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ধরনা আসলে সত্যাগ্রহ, তিনি আরো বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। তাঁর কথায়, কত বড় সাহস ওদের! ওরা পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছে!
‘আমরা মোদির বিরুদ্ধে ১৯ জানুয়ারি মিটিং করেছি। তাই আমাদের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ,’ বললেন মমতা।
তিনি আরো বলেন, ক্যাবিনেট মিটিং করব এই মেট্রো চ্যানেলেই বসে। সিবিআই সিক্রেট অপারেশনে এসেছিল।
‘ওরা ভয় পেয়েছে। রাজনৈতিকভাবে লড়াই করতে পারছে না বিজেপি। তাই এই নোংরামি করে বেড়াচ্ছে, ‘বলেন মমতা।
প্রসঙ্গত, গত দু’বছর ধরেই চিটফান্ড কেলেঙ্কারীর তদন্তের জন্য রাজীব কুমারকে তলব করে যাচ্ছিল সিবিআই। তিনি একবারও হাজিরা দেননি। সূত্রের খবর, একাধিকবার সিবিআই-এর নোটিশ অমান্যের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হতে পারে।
এর আগে রাজীব কুমারের পাশে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, কলকাতা পুলিশের বর্তমান কমিশনার বিশ্বের সেরাদের মধ্যে একজন। তাঁর সততা ও সাহসিকতা প্রশংসিত। তিনি ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যান। মাত্র একদিনের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন। তাতেও এত প্রশ্ন! মিথ্যা ছড়ানোর একটা লিমিট থাকে! কিন্তু মিথ্যাটা চিরকালই মিথ্যাই থেকে যায়! তা সত্যি হয় না।
মমতার এই ধরনাকে সমর্থন জানিয়েছে ভারতের অধিকাংশ বিরোধী দল। ফোন করেন রাহুল গান্ধী, মায়াবতী, অখিলেশ যাদব।
কিন্তু বিজেপি এই সুযোগে মমতাকে আবার আক্রমণ করেছে। সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় টুইট করে বলেন, অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত বাংলায়। এই দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যটাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছেন। এখন সিবিআই-এর কোপ পড়ায় নিজের দুর্নীতির সঙ্গীদের বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, সিবিআই-এর কাজে বাধা দিয়েছে রাজ্য পুলিশ।
পুলিশ কমিশনারের বাড়িতেই ঢুকতে দেয়নি সিবিআই কর্মকর্তাদের। এর থেকে লজ্জাজনক ব্যাপার আর কিছু হয় না। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশ এমন লজ্জার সাক্ষী হলো এই প্রথমবার। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্বই নেই এই বাংলায়। ওদের রূপটা সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেছে এখন।