ভবন ঝুকিপূর্ণ থাকায় এক সপ্তাহের মধ্যে গাংনী হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ ॥ মেহেরপুরে অর্ধশত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ

ভবন ঝুকিপূর্ণ থাকায় এক সপ্তাহের মধ্যে গাংনী হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ ॥ মেহেরপুরে অর্ধশত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ


নয়ন আমাদের মেহেরপুর ডট কম ঃ
মেহেরপুরের গাংনী হাসপাতালের ভবন যে কোন সময় ধসে ঘটতে পারে। রবিবার গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম ও গাংনী পৌর মেয়রpic 1 (1) আহাম্মদ আলী হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এসময় হাসপাতালের অবস্থা দেখে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের নিরাপত্তাহীন আবেদনের ভিত্তিতে হাসপাতালের আর.এম.ও ডাঃ মোঃ আনোয়ারুল ইসলামকে এক সপ্তাহের মধ্যে রোগীদের নিরাপদ স্থানে অপসারন করে হাসপাতাল বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এ সময় ভর্তিকৃত রোগীরা জানান, আমরা অসুস্থ অবস্থায় বেডে শুয়ে আছি এ সময় হাসপাতালের ছাঁদ থেকে প্লাস্টার খোসে আমাদের গাঁয়ে পড়ছে। এমন কি ছাঁদের সাথে ঝুলন্ত ফ্যান খুলে পড়ছে। এ ব্যাপারে আর.এম.ও আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে ছাঁদের রডে ঝুলানো তিনটি ফ্যান খুলে নিচে পড়ে যায়। সেখানে কোন রোগী না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরো বলেন, ছাঁদের রড গুলি এমন ভাবে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়েছে একটি ফ্যানের ধারন ক্ষমতা হারিয়েছে হাসপাতাল ভবনটি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, আমরা সাভারের মত কোনো ট্র্যাজেডি দেখতে চাইনা। বিল্ডিংটি ব্যাবহার করা খুব রিস্ক তাই আমরা এটি বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দিয়েছি। কোনো প্রকৌশলী দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিনি যদি ব্যাবহার উপযোগী সার্টিফিকেট প্রদান করেন সে ক্ষেত্রে বিবেচনা করব। পৌর মেয়র আহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, আমি জনগনের সেবক জনগনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমি হাসপাতালে গিয়েছি, সেখানে গিয়ে দেখি রোগীদের মাঝে চরম আতংক। চিকিৎসা নিতে এসে ছাঁদ চাপা পড়ে মারা যাবে আমার পৌর সভায় এ দৃশ্য দেখতে চাইনা। । এদিকে সাভারের রানা প্লাজার ভবন ধসের ঘটনার পরও টনক নড়েনি জেলায় বসবাসকারী কিছু অবুঝ মানুষ ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। জেলায় সরকারী বেসরকারী প্রায় অর্ধশত ভবন বসবাসের অযোগ্য ঘোষনার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে শত শত মানুষ। ভবনগুলির বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল।
কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ ভবনগুলিকে বসবাসের অযোগ্য ঘোষনা করলেও ভেঙ্গে ফেলার কোন উদ্যোগ নেয়নি অদ্যবধি। ফলে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে আছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাসরত শত শত লোকজন সাভার ট্র্যাজেডীর পর পরিত্যাক্ত ফাটল ধরা ভবনে বসবাস নিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে মৃত্যু আতঙ্ক। কিন্তু বিকল্প ব্যাবস্থার অভাবে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই এই সমস্ত ভবনগুলি ব্যাবহৃত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে রেজিস্ট্রি কাজ মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের পুরানো কার্যালয় ভবন, পুরাতন হাসপাতাল ভবন, যক্ষা হাসপাতাল, পুরাতন সাব-রেজিষ্টার ভবন, পুরাতন জেলখানা, সদর উপজেলা কার্যালয় এলাকায় বিভিন্ন অফিসার্স ভবন, সদর পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা নির্বাচন অফিস ভবনগুলিতে এখন চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগ ও পৌরসভার হিসাবে জেলায় সরকারী ১০-১৫ টি ও বেসরকারী ৩০ থেকে ৩৫টি মত বসবাসের অযোগ্য ভবন রয়েছে।
পুরাতন হসপাতালের পরিত্যাক্ত ভবনে থাকা পুলিশ ফাঁড়ির এক সদস্য বলেন, আমরা বিপদজনক ভেবেও এখানে বসবাস করছি। কারণ আমাদের ফাঁড়ি এখানে। সর্বদা নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে রয়েছি। যে কোন সময় মাথার ওপর ছাদ ভেঙ্গে পড়তে পারে। মেহেরপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ বলেন, শহরের অনেক ভবন আছে যা পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়নি। এই সব ভবনে বাস করা খুবই ঝুঁকিপূর্ন।
তিনি আরোও বলেন, সম্প্রতি সময়ে মেহেরপুর শহরে বেশকিছু বহুতল ভবন নির্মান করা হয়েছে। যেগুলো বিল্ডিং কোড না মেনেই। বড় ধরনের কালবৈশাখী ঝড়, টর্ণেডো কিংবা ভূমিকম্প হলে এসব নতুন ভবন গুলিও ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিসের এক কর্মচারী বলেন, তারা অনেকটা নিরুপায় হয়ে পরিত্যক্ত ভবনে অফিস করছে। কারণ বিকল্প ব্যবস্থা নেই। মেহেরপুরের পৌর মেয়র মোতাছিম বিল্লাহ মতু বলেন, ভবন গুলি ভাঙ্গার জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগীতা না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারিনি। কারণ ভবন গুলি ভাঙ্গার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতির প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকায় সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। অনেক আগেই এই সমস্ত ভবন বসবাসের অযোগ্য ঘোষনা করলেও বসবাসকারীরা বলছেন- বিকল্প ব্যাবস্থা গড়ে না ওঠায় তারা বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ভবন ভেঙ্গে ফেলার মূল দায়িত্ব পৌরসভার হলেও তারা সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।
মেহেরপুর সংবাদ