প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান মার্কেলের সরে যাওয়ার ঘোষণায় সংকটে পড়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবার। সংকট উত্তরণে আজ সোমবার প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। নরফ্লকের স্যান্ড্রিংহামে হ্যারি দম্পতির ভবিষ্যত্ ভূমিকা নির্ধারণে আয়োজিত বৈঠকে যোগ দিতে রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের তলব করেছেন রানি।
প্রাসাদের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বৈঠকে প্রিন্স হ্যারি, প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্স উইলিয়াম উপস্থিত থাকবেন। মেগান মার্কেল কানাডা থেকে টেলিফোনে বৈঠকে যোগ দেবেন। সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। আলোচনায় ভবিষ্যতে এ দম্পতির অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এছাড়া তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আসবে। এ বৈঠকের মাধ্যমে সংকটের সমাধান আসবে এমনটা এখনই কেউ বলছেন না। তবে আগামী দিনগুলোতে রাজপরিবার কোনো চুক্তিতে পৌঁছলে তা বাস্তবায়িত হতে কিছুটা সময় লাগবে। বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান পেতে এখনো কিছু বড়ো বাধা রয়েছে।
এদিকে ভাই হ্যারির সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য মর্মাহত বলে জানিয়েছেন প্রিন্স উইলিয়ামস। সানডে টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, প্রিন্স উইলিয়াম এক বন্ধুকে বলেছেন, আমার জীবনে সব সময় ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখেছি। সেটা এখন আর হবে না। তবে সংকট সমাধানে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করব।
গত সপ্তাহে রাজপরিবার ছাড়ার ঘোষণা দেন প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী। তারা রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ (সোভেরেইন গ্র্যান্ট) গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এখন থেকে তারা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর জীবন-যাপন করতে চান। হ্যারির আয়ের ৯৫ শতাংশ আসে তার বাবা প্রিন্স চার্লসের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডুসি অব কর্নওয়ালের ভূসম্পত্তি থেকে। এছাড়া মা প্রিন্সেস ডায়ানার উত্তরাধিকার হিসেবে কয়েক মিলিয়ন ডলার পেয়েছেন হ্যারি। অন্যদিকে বিয়ের আগেই ৫০ লাখ ডলারের মালিক ছিলেন মেগান। দ্য টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, রাজপরিবারের দায়িত্ব ছাড়লে ভবিষ্যতে প্রিন্স হ্যারিকে অর্থ দেওয়া বন্ধ করতে পারেন প্রিন্স চার্লস।
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ দম্পতিকে অর্থের জন্য বেশি কষ্ট করতে হবে না। তারা রাজপরিবারের ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে অর্থ আয় করতে পারেন। বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, এই দম্পতি বই লিখে অর্থ আয় করতে পারেন। বিয়ের আগে তিনি লাইফ স্টাইল ব্লগে লিখতেন। টিভি অনুষ্ঠান ও ফিল্ম থেকেও এই দম্পতি আয় করতে পারেন। কারণ মেগান আগে একজন অভিনেত্রী ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েও আয় করতে পারেন এ দম্পতি। এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বন্যপ্রাণী দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার জন্য ডিজনির সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছেন মেগান।
অন্যদিকে প্রিন্স হ্যারির রাজপরিবার ছাড়ার ঘোষণায় অনেকেই মেগানকে দুষছেন। সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, প্রথম যখন হ্যারি ও মেগানের প্রণয়ের খবর প্রকাশ হয় তখন অনেক ব্রিটিশের স্পষ্ট বার্তা ছিল যে, তুমি আমাদের কেউ নও, তাই তুমি স্বাগত নও। বার্মিংহাম সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কেহিন্দে অ্যান্ড্রুসের মতে, বিশ্বে ব্রিটিশ রাজপরিবার ‘সাদা’ প্রতীক। কৃষ্ণাঙ্গ মেগানকে কখনোই পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া হবে না।