দেশের মানুষ ক্রমেই নাগরিক বোধ হারিয়ে ফেলছে: সুলতানা কামাল

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন,দেশের মানুষ ক্রমেই নাগরিক বোধ হারিয়ে ফেলছে। তাই নাগরিক বোধের এই অনুষ্ঠানে মানুষের ভিড় ক্ষীণ। যেসব অনুষ্ঠানে দলীয় আনুগত্যের ব্যাপার আছে, সেখানে কিন্তু শয়ে শয়ে, হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হবে। যেখানে শুধু ক্ষমতার কাছে আনুগত্য থাকে, সেখানে আমরা থাকি। আর যেখানে নিজস্ব ধ্যানধারণা প্রকাশের ব্যাপার থাকে, সেখানে উপস্থিতি কম থাকে।

রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে আজ রোববার বিকেলে এক নাগরিক স্মরণসভায় সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। অধ্যাপক অজয় রায়কে স্মরণে এই সভার আয়োজন করে অধ্যাপক ড. অজয় রায় স্মরণ নাগরিক কমিটি।

সুলতানা কামাল বলেন,এতে আমি বিস্মিত নই। এ ধরনের নাগরিক স্মরণসভায় মানুষের সমাগম বেশি থাকে না। যেহেতু আমরা নাগরিক বোধ হারিয়ে ফেলছি, তাই নাগরিক কোনো অনুষ্ঠানে নাগরিকদের উপস্থিতি কম থাকবে। আজকে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে ক্ষমতায় আছেন, সপক্ষে কথা বলে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ ভালো জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অনবরত আপস করছেন। সেই জায়গায় অজয় রায় একজন অনন্য মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আছেন, থাকবেন।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেছেন,এই রাজনৈতিক সময়ে আমরা মৌনতা অবলম্বন করছি, যা দুঃখজনক। রাজনৈতিক এই পরিবেশে আমরা শুধু আপস করতেই দেখছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ক্রমে বিসর্জনের পথে চলেছে। এই জায়গা থেকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিহীন একটি রাষ্ট্র যখন পরিচালিত হয়, তখন এমন কষ্টে মানুষকে সারাক্ষণ দহন করতে থাকে। আজ অজয় রায় নেই। তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তাঁর জ্ঞান, কাজ, আদর্শ, চিন্তা ও পরিবর্তনের আশার পথে আমাদের চলতে হবে।

অজয় রায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রায় সব গণতান্ত্রিক ও নাগরিক আন্দোলনে সামনের কাতারের মানুষ ছিলেন। ২০১২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে একুশে পদক পান তিনি। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে মারা যান এই অধ্যাপক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, অজয় রায় ছাত্রজীবনের শুরু থেকে গণজাগরণ ও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি চাইতেন এই দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। স্বাধীন দেশের নীতিতে সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে, তবে বাস্তবায়ন হয়নি। বিজ্ঞানমনস্ক এই শিক্ষক সব সময় দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি কখনোই শিক্ষকতায় অবহেলা করেননি। তাঁর চিন্তা, ব্যক্তিত্ব ও কর্মজীবন সবার শিক্ষণীয়।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, এই জাতির বিশাল অর্জন আজ বিসর্জনের পথে। শাসকসহ বিশাল অংশের মানুষ এই অর্জনকে বিসর্জন দিচ্ছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, আলোকিত মানুষ অজয় রায় সব সময় ছিলেন প্রগতির চিন্তায় সমৃদ্ধ। আর প্রগতির চিন্তাকে চাপাতি দিয়ে পেছানো যায় না। তিনি তাঁর কাজের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন।

নাগরিক স্মরণসভায় বক্তব্য দেন অজয় রায়ের ছেলে অনুজিৎ রায়, অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, অধ্যাপক এ এন রাশেদা প্রমুখ।

বাংলাদেশ