রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা এখন নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তাদের প্রধান টার্গেট ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তির কাছে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড দুটির একটি থাকতেই হবে, অন্যথায় মারধর তো আছেই, অনেক সময় প্রাণও হারাতে হয় হতভাগ্য যাত্রীকে। ৩০ থেকে ৩৫ বছরের চারজনের‡যাত্রীবেশী একটি সাদা রঙের পুরোনো স্টেশন ওয়াগন এসে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য ডাক দিতে থাকে। দুজন পেছনের সিটে বসা আর সামনে চালকের পাশে আরও এক যাত্রী থাকায় প্রাইভেট কারের পেছনে ডান পাশের আসনে বসেন ফয়সল। বনানী ঘুরে প্রাইভেট কারটি আবারও উত্তরার দিকে যেতে থাকে। একই সঙ্গে ফয়সলের কাছে কী কী আছে জিজ্ঞেস করতে থাকেন ওই যুবকেরা। মানিব্যাগ, নগদ ৩০ হাজার টাকা, মুঠোফোনটি ফয়সল তুলে দেন এক ছিনতাইকারীর হাতে। ফয়সলের কাছ থেকে দুটি ক্রেডিট কার্ড ছিনিয়ে নেয় তারা।উত্তরা এলাকার দুটি বুথ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে মোটরসাইকেলের যুবক ফোন করলে ফয়সলকে বেলা দুইটার দিকে বলাকা বিমান কার্যালয়ের পাশে নামিয়ে দেওয়া হয়।
থানায় কর্তব্যরত কর্মকর্তার গালমন্দ উল্টো হজম করও খিলক্ষেত থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেনি ফয়সল উপপরিদর্শক পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা গালমন্দ করে ফয়সলকে বলেন, ‘কেন প্রাইভেট কারে চড়লেন? খিলক্ষেতে নয়, উত্তরা থানায় গিয়ে মামলা করেন। মিরপুরের বাসায় যাওয়ার সময় ৩০ বছর বয়সী ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে র্যাডিসন হোটেলের একটু আগে, বারিধারা বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে অস্ত্রের মুখে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন পাঁচ যুবক।রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় আশুলিয়া এলাকার একটি নির্জন স্থানে তাঁকে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা।
এসব ঘটনার সারসংক্ষেপ শোনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আবদুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন এ ধরনের ছিনতাই ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উপকমিশনারদের তত্ত্বাবধানে একাধিক দল কাজ করছে। অনেকে ধরাও পড়েছে। তবে প্রাইভেট কারের ভেতর সর্বস্ব হারানোর ঘটনায় গত তিন মাসে মামলার কোনো তথ্য ডিএমপির তথ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যাঁদের কাছে টাকা থাকে, ক্রেডিট কার্ড থাকে, তাঁরা কেন ঝুঁকি নিয়ে এ ধরনের প্রাইভেট কারে ওঠেন?
নিজেদের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এ ধরনের ছিনতাইকারীদের দমন করা হয়ে থাকে বলে জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এ টি এম হাবিবুর রহমান। গতকাল সোমবার নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ এলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই।’