টিআইবিকে শিগগিরই তলব করা হচ্ছে

টিআইবিকে শিগগিরই তলব করা হচ্ছে

মন্ত্রী ও এমপিদের নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদনের জন্য বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি করা হচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-কে। শিগগিরই তাদের তলব করে চিঠি পাঠানো হবে। এর আগে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিবেদনের তথ্য, উপাত্ত ও পদ্ধতি চাওয়া হবে। সরকার ও মহাজোটের শরিক দলের এমপিদের চাপে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে সবকিছু দেখভাল করছেন স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ। এরই মধ্যে তিনি বেশ কয়েকজন সিনিয়র এমপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ নিয়ে তাদের মতামত নেয়া হয়েছে। প্রায় সব এমপি টিআইবিকে কমিটিতে ডাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি দলীয় এমপি মুজিবুল হক চুন্নু  এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, টিআইবি যেভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে তা এমপিদের জন্য অসম্মানজনক। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের জবাবদিহির বাইরে বলে মনে করে। স্পিকার এ নিয়ে আমার মতামত চেয়েছেন। আমি তাদের তলব করার কথা বলেছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার নিজে। এদিকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক বলেছেন, আইনের দুর্বলতার কারণে টিআইবিকে সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি করা সম্ভব নয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি যদি তলবে সাড়া দিয়ে আসে সেটা অন্য কথা। কমিটি তাদের বাধ্য করতে পারবে না। এর আগে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি করতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান সংসদ। এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রতিবেদনের কপি স্পিকারকে দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তিনি আমাদের তলব করেননি। যদি করেন তাহলে অবশ্যই সংসদীয় কমিটিতে যেতে আমরা রাজি। তিনি বলেন, সংসদে আমাদের প্রতিবেদনের নেতিবাচক দিক নিয়েই শুধু আলোচনা হয়েছে। অনেক ইতিবাচক বিষয়ও প্রতিবেদনে ছিল। অথচ এমপিরা এ নিয়ে কোন কথাই বলেননি।
সদ্য শেষ হওয়া ৯ম জাতীয় সংসদের ১৫তম অধিবেশনে টিআইবির রিপোর্ট নিয়ে সংসদে এমপিরা চ্যালেঞ্জ করলে স্পিকার পরে সিনিয়র এমপিদের পরামর্শ নিয়ে তার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন। এর আগে গত ১৪ই অক্টোবর টিআইবি তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলে, ১৪৯টি আসনের জরিপে দেখা গেছে ৯৭ শতাংশ সংসদ সদস্য দুর্নীতিবাজ। এ নিয়ে ১৯শে নভেম্বর সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে এমপিরা টিআইবির প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ জানান। তারা বলেন, সংসদের বিশেষ অধিকার কমিটিতে তাদের ডাকা হোক। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হোক- কিসের ভিত্তিতে তারা ঢালাওভাবে এ ধরনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া টিআইবির কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে বন্ধের পাশাপাশি তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানানো হয়। প্রতিবেদনের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ না দিতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এমপিরা। জনপ্রতিনিধিদের হেয় করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে টিআইবি ও এনজিওগুলোর নির্বাচনে অংশ নেয়ারও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এমনকি যারা জরিপে অংশ নিয়েছে তাদের আয়ের উৎস খতিয়ে দেখার দাবি জানান। এমপিরা বলেন, নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে টিআইবির এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর পরই তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংসদে জানান, জার্মানির বার্লিনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সদর দপ্তরে ট্রাসপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ পাঠাবে সরকার। এমপিদের নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে ‘বস্তুনিষ্ঠ’ প্রতিবেদন তৈরির জন্য বলা হবে। তিনি বলেন, টিআইবি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমপিদের হেয় করার জন্যই রিপোর্টটি দিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, টিআইবি কিসের মাপকাঠিতে ৩২০টি নিবন্ধনকৃত দৈনিক পত্রিকার মধ্য থেকে পাঁচটি পত্রিকা বাছাই করলো? ফোকাস গ্রুপে যারা আছেন এবং যিনি সঞ্চালক তাদের পছন্দমতো ধারণা থেকেই গবেষণার এলাকা এবং ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যে ৬০০ ব্যক্তিকে সচেতন হিসেবে উল্লেখ করে মতামত নেয়া হয়েছে তারা টিআইবি পরিচালিত সনাক বা ‘সচেতন নাগরিক গোষ্ঠীর’ সদস্য। যেসব স্থানে সনাক আছে শুধুমাত্র সেসব আসনেই টিআইবি জরিপ করেছে, যেখানে সনাক নেই সেখানে জরিপ করা হয়নি।

বাংলাদেশ