ছিচকে চোর যে ভাবে আজ ছিনতাই ছিন্ডিকেটর মূল হোতা–গাংনীর সেই ছিনতাইকারী জনপ্রতিনিধি ময়নাল মেম্বর যেভাবে কোটিপতি

ছিচকে চোর যে ভাবে আজ ছিনতাই ছিন্ডিকেটর মূল হোতা–গাংনীর সেই ছিনতাইকারী জনপ্রতিনিধি ময়নাল মেম্বর যেভাবে কোটিপতি

gagni mapআমাদের মেহেরপুর ডট কম ঃ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জনগনের কাছে এখন আলোচিত একটি মুখ ষোলটাকা ইউপি’র দাপুটে মেম্বর ময়নাল হক। তিনি ইতোমধ্যে দুটি ছিনতাই মামলায় জড়িয়ে পড়েছে। আরো ২ টি ভুট্রা,মসুড়রী ও পাটের ট্রাক ছিনতায়ের মামলা প্রক্রিয়াধিন। এতে করে বেরিয়ে এসেছে তার বর্তমান ছিনতাই নাটকের কেচ্ছা ও তার পুরানো অতীত। এলাকাবাসি বলতে শুরু করেছে এক কালের ছিচকে চোর যে ভাবে আজ জেলা ছিনতাই ছিন্ডিকেটর মূল হোতা।
জানা যায়, ষোলটাকা গ্রামের ময়নাল হক মেম্বর বছর দশেক আগেও চুরি করে বেড়াতো। মাছ চুরি কিংবা ছাগল চুরিতে সে ছিলো সিদ্ধ হস্ত। গ্রামে এ চুরির ঘটনায় বেশ ক’বার সালিশ ও জরিমানা হয়। পরে ব্যবসা করতে গিয়েও কুষ্টিয়া এলাকায় মহাজনের টাকা আত্বসাৎ করে পালিয়ে আসে। তার ভাই হান্নান বিদেশ গিয়ে অবৈধ ভাবে ভিওআইপি ব্যবসায় কিছু টাকার মালিক হয়। পাশা পাশি আদম ব্যবসা শুরু করে। বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এলাকার অর্ধশত ছেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেয়ায় সালিশ বৈঠক হয়। পরে অর্ধেক করে টাকা পরিশোধ করে মুক্ত হলেও অন্ততঃ ১০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত দেয়নি। তার প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন তেরাইল গ্রামের হক সাহেব। সৌদি আরবে নেয়ার কথা বলে সাড়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া ভিসায় পাঠানো হয়। হক সাহেব সে দেশের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এক বছর কারাভোগের পর দেশে ফিরে আসে। দেশে এসে টাকা দাবী করলেও তাকে টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। বরং উল্টা মামলার ভয় দেখানো হয়। একই ঘটনার স্বীকার হন হাড়িয়াদহ গ্রামের সুরাম আলী।
অপর একটি সুত্র জানায়, ময়নাল মেম্বর নির্বাচনের আগে কালো টাকার খেলা করেছেন। তার বিপরীতে যাতে কেউ নির্বাচনে অংশ না নেয় তার জন্য টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করেন। এ টাকা প্রদানের ব্যাপারেও রয়েছে নানা মুখোরোচক কাহিনী। অনেকে বলেছেন অন্ধকার জগত থেকে আয় করা টাকা ব্যয় করতে কারো অসুবিধা হয় না। সুত্রটি আরো জানায়, এলাকায় যত চাঁদাবাজি হয় সে টাকা কালেকশন করে তা ময়নাল মেম্বরের বাড়িতে বসে ভাগ হয়। চোরাই গরু কিংবা মোটর সাইকেল হাত বদল হয় ময়নালের বাড়ি থেকে। সম্প্রতি একটি মোটর সাইকেল হাত বদল হয়েছে বলেও সুত্রটি মত প্রকাশ করেছেন। কালো টাকার পাহাড় গড়ে ময়নাল নিজ গ্রাম ষোলটাকা ও গাংনীতে গড়ে তুলেছেন ১০ কোটি টাকার দু’টি বাড়ি, মৎস্য খামার ও গবাদি পশুর ফার্ম। গত ৭ এপ্রিল আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ি ছাতিয়ানের পাঞ্জাব ও রুহুল কুষ্টিয়া র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার গোপন কথাগুলো ফাঁস হয়ে পড়ে। একটি গোপন সুত্র জানায়, ময়নালের ছিনতাই সিন্ডিকেটে অন্ততঃ ১০ জন রয়েছে যারা আন্তঃজেলা সিন্ডিকেটের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে অল্প টাকায় মালামাল কিনে বেশী দামে বিক্রি করে থাকেন। যার প্রমান মিলেছে গত ৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার জিবননগর থেকে ছিনতাই হওয়া ভুট্টা উদ্ধারের মধ্য দিয়ে। জীবননগরের জনৈক আব্দুল কুদ্দুসের ৪১২ বস্তা ভুট্টা ও সরোজ গঞ্জের ৩৭০ বস্তা ভুট্টা গত ৯ এপ্রিল জীবননগর ও গাংনী থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে। ছিনতাই নাটকের নায়ক যশোর হাসেমপুরের ট্রাক চালক রঞ্জু আহমেদের স্বীকারোক্তিতে ও তার দেয়া তথ্য মোতাবেক পাওয়া যায় বিচিত্র সব তথ্য। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
অপরদিকে ম্যাগনেট ও স্বর্নের মূর্তির ব্যাবসার আড়ালে দীর্ঘ্যদীন ধরে প্রতারনা করে আসছে প্রতারক চক্র। সম্প্রতি সময়ে ফরিদপুর ও বগুড়া জেলা থেকে স্বর্নের মূর্তি ক্রয় করে তা লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। যা তদন্ত করলে পাওয়া যাবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে ময়নাল মেম্বর পুলিশের অভিযানে গা ঢাকা দিলেও তার দলের লোকজন প্রশাসনকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গাংনী থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, ময়নাল মেম্বরের ব্যাপারে গাংনী থানায় বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে সেগুলো তদন্ত চলছে। শীঘ্র ময়নাল মেম্বরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে। বর্তমানে সে পলাতক রয়েছে। এব্যপারে ময়নাল মেম্বরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নী।
মেহেরপুর সংবাদ