জমি ক্রয় সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে গেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বামন্দীতে পল্লীবিদ্যুতের উপকেন্দ্র স্থাপনের কাজ। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বারবার ভুমি জরিপ করলেও গত ৩ বছরেও তা অধিগ্রহন করা হয়নি। হাতে নেয়া হয়নি উপকেন্দ্রটি নির্মানের কোন পদক্ষেপ। ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ সমস্যায় ভুগছেন গাংনী উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অন্ততঃ ১৫ হাজার গ্রাহক। বিদ্যুত উপকেন্দ্র নির্মান ও বিদ্যুৎ সরবরাহর দাবীতে একেরপর এক মানব বন্ধন সমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচী পালিত হলেও গত ৩ বছরেও তার কোন সমাধান হয়নি। গাংনীর বামন্দি পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতায় বামন্দি, ষোলটাকা, কাজীপুর ও মটমুড়া ইউনিয়নে কোল্ড স্টোর, ফ্লাওয়ার মিল, রাইচ মিলসহ অন্ততঃ শতাধিক কলকারখানা রয়েছে। এছাড়াও কৃষি ও আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা অন্ততঃ সাড়ে ১৪ হাজার। এসকল গ্রাহকগণ প্রতিদিন মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘন্টা বিদ্যুত পেয়ে থাকেন। আবার মাঝে মধ্যে লো ভোল্টেজের ফলে সেচপাম্প ও কলকারখানার মোটর পুড়ে যাচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ছোট ছোট কলকারখানার মালিকরা পথে বসেছেন। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গাংনীর বামন্দীতে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। স্থানীয় লোকজন জনস্বার্থের কথা ভেবে বামন্দি বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে একটি জমি পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার জমিটির মাপজোক করলেও অজ্ঞাত কারণে তা আজো অধিগ্রহন করেননি।
বামন্দি বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি হাজী মতিয়ার রহমান জানান, ফ্লাওয়ার মিলসহ তার ৪টি কারখানা রয়েছে। অব্যাহত লোডশেডিং ও লোভোল্টেজের কারণে মিলের কার্যক্রম বন্ধ হবার উপক্রম। কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিকের বেতন ভাতা পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন জামান কোল্ড স্টোরের স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান। তিনি জানান, ঠিকমত বিদ্যুত না পাওয়ায় কোল্ড স্টোরের রক্ষিত মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মালামাল সংরক্ষণকারীদের কে দিতে হচ্ছে ক্ষতিপূরণ। গাংনী রাইচমিল মালিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, বামন্দি (৪নং ফিডারে) পল্লী বিদ্যুত উপকেন্দ্রের আওতায় অন্ততঃ একশ’টি রাইচ মিল রয়েছে। বিদ্যুত না থাকায় রাইচ মিলগুলির অনেকটি বন্ধ হয়ে গেছে। পথে বসেছেন অনেক মিল মালিক। শহড়াবাড়িয়া মিয়া খামারের সত্বাধিকারী হাসিবুর রহমান জানান, লোভোল্টেজের কারণে গত ৬ মাসে তার ৮টি মোটর পুড়ে গেছে। ধান উৎপাদনে ঘটেছে বিপর্যয়। বামুন্দী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চপল বিশ্বাস জানান,বিদ্যুতের লোড সেডিংয়ের কারনে ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ হওয়ার পথে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, ২০১১ সালে বামন্দি এলাকায় একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তা মঞ্জুর করে। জমিও পাওয়া যায়। প্রথমে একনেক অর্থ বরাদ্দ দেয়ার কথা বললেও পরে বরাদ্দ না দেয়ায় জমি অধিগ্রহন করা সম্ভব হয়নি। এখন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তেমন কোন অর্থ নেই যা দিয়ে উপকেন্দ্রের জন্য জমি ক্রয় করা সম্ভব। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে জমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু করা সম্ভব।
তিনি আরো জানান, এ উপকেন্দ্রটি স্থাপন করা হলে বিদ্যুৎ সরবারাহ নিশ্চিত ছাড়াও অন্ততঃ কয়েক হাজার নতুন সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে।