কোরান, বিজ্ঞান এবং একবিংশ শতাব্দী Dr Zakir Naik

কোরান, বিজ্ঞান এবং একবিংশ শতাব্দী

Dr Zakir Naik:ঃ

  1. কোরান, বিজ্ঞান এবং একবিংশ শতাব্দীইসলাম এবং একবিংশ শতাব্দীর উপরে Oxford Unionএ অসাধারণ একটি লেকচার দিয়েছিলেন। ১৪০০ বছর পূ ঘুমর্বে নাযিল হওয়া কোরান শরিফ কি করে একবিংশ শতাব্দীর মানবকূলের পথ নির্দেশক হতে পারে সেই সম্পর্কে তিনি চমৎকারভাবে বলেছেন।বিজ্ঞানের আলোকে তাঁর আলোচনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করেছে যে কোরান আল্লাহর কিতাব এবং এই কিতাবেই রয়েছে মানব, এবং সৃষ্টি জগতের জন্য সঠিক নির্দেশনা।

সময়ের পরীক্ষায় কি করে আল্লাহর বানীসমৃদ্ধ এই ১৪০০ বছরের পুরনো কিতাবটি পাশ করেছে বা করল তা তিনি কোরানের বিভিন্ন সূরার আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমান করেছেন।কোরানে ৬০০০ হাজারের বেশী আয়াত রয়েছে এবং এরমধ্যে ১০০০টি শুধু বিজ্ঞান বিষয়ক।আলবার্ট আইনস্টাইন , ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞানকে খোঁড়া এবং বিজ্ঞান ছাড়া ধর্মকে অন্ধ বলেছেন। ডাক্তার জাকির কোরানকে বিজ্ঞানসম্মত হওয়ায় ইসলাম ধর্মকে অন্ধত্বমুক্ত বলে প্রমান করেছেন।

১৪০০ বছর পূর্বের এই কিতাবটি সূদুর অতীত থেকে অদ্যাবধি , অর্থ্যাৎ আজকের একবিংশ শতাব্দীতেও মানবকূলের পথ নির্দেশক। এটি একটি পরিপূর্ন জীবন বিধান, কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ । আধূনিক বিজ্ঞানের সাথে কোরানের সাদৃশ্য এই গ্রন্থটিকে
কালজয়ী জীবনবিধানের মর্যাদায় উন্নীত করেছে।যদিও কোরান science নয় বরং signsএর অর্থ্যাৎ জীবনের বিভিন্ন দিক নির্দেশক কিতাব।

কোরান শান্তির বানীসমৃদ্ধ মানবতার প্রকোষ্ঠ ঘোষনা।কোরান শরীফকে আজো আরবী ভাষায় লিখিত কিতাবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়।আজকের লেখায় আমি এমনই কিছু বিষয়ের অবতারনা করছি যা বিজ্ঞান আবিষ্কার করার বহূ পূর্বে কোরান শরীফে বলা হয়েছে।

১/ Big Bang Theory: ১৯৭০ সালে বৈজ্ঞানিকরা প্রথম বলেন যে, সৃষ্টির আদিতে সব ছিল একটি বিন্দুর মত, পরে প্রচন্ড বিস্ফোরণে সবকিছু আলাদা হয়ে সৌরমণ্ডল , গ্রহ, নক্ষত্র , চাঁদ , সূর্য , পৃথিবী ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সূরা আমবিয়াতে ১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে “.. পূর্বে আকাশমন্ডলী আর পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে এক হয়ে ছিল, পরে আমি তাদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আলাদা করে দিলাম। বিজ্ঞানও একইভাবে বিশ্বাস করে যে, গতানুগতিকতার মাধ্যমে নয় বরং মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে।

২/ পৃথিবী বর্তুলাকার: পৃথিবী গোলাকার এই সত্যটি মানুষ জানতে পারে ১৫৭৭ সালে যখন স্যার ফ্রান্সিস ডেক জাহাজে করে পৃথিবীর চারিপাশ প্রদক্ষিণ শেষে বলেন যে, পৃথিবী বর্তুলাকার।অথচ ১৪০০ বছর আগেই কোরানে বলা হয়েছে পৃথিবীর আকার ডিমের মত, পুরো গোল নয় বরং পূর্ব ও পশ্চিমে কিছুটা চাপা।সূরা নাজিয়াতে পৃথিবীকে উট পাখির ডিমের ন্যায় বলা হয়েছে।

৩/ চাঁদের আলো: চাঁদের আলো যে ধার করা এই সত্যটি বিজ্ঞান এখন জানলেও কোরান শরিফের সূরা ফুরকানে এ বিষয়ে আগেই বলা হয়েছে যে, সূর্যের আলো নিজস্ব, কিন্তু চাঁদের আলো সূর্যের আলোর প্রতিফলন মাত্র।

৪/ পানিচক্র: বিজ্ঞানে পানিচক্রের (হাইড্রেলজি) কথা বলা হয়েছে ; ১৫৮০ সালে স্যার বার্নাড প্যালেসি পানিচক্রের বর্ননা দেন।আর সেই একই কথা ১৪০০ বছর আগে কোরানে আল-জুমার, নূর, রদ, ফুরকান, ইয়াসিন, কাহাব, মুলক ইত্যাদি সূরার বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে।ভূপৃষ্ঠের পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠে ঘনীভূত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টি আকারে পৃথিবীতে নেমে আসে এবং এভাবেই এই চক্রটি চলমান থাকে বা আছে, এই বিষয়ে বিজ্ঞান যা বলেছে, কোরানেও তাই ই বলা হয়েছে।

৫/ সূর্য ও চাঁদের আবর্তন : সূরা আমবিয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন রাত দিন, সূর্য চাঁদ। সূর্য ও চাঁদ কক্ষপথে ঘোরে এবং নিজ নিজ অক্ষপথে আবর্তন করে।বিজ্ঞানেও একইভাবে বলা হয়েছে।কোরান শরিফের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে পরবতীতে আরবীয়রা জ্যোতিরবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখতে পেরেছিল ।

৬/ সমুদ্রবিদ্যা: সূরা ফুরকানে বলা হয়েছে, “তিনি দুই দরিয়াকে সৃষ্টি করেছেন; সৃষ্টি করেছেন সুপেয় বা মিষ্ট এবং লোনা বা খর পানির আধার।তারা একইসাথে প্রবাহিত হলেও মিশে যায়না।তাদের মধ্যে রয়েছে অন্তরায় যা অতিক্রম করা যায়না।”কোরানের এই বর্ননার প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করে বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর হে বলেছেন, “মানুষ এই সত্য আবিষ্কার করেছে কিছুদিন আগে কিন্তু কোরান কি করে হাজার বছর আগে এই সত্য জেনেছে?”

৭/ জীববিদ্যা: সূরা আমবিয়াতে বলা হয়েছে, “আমি প্রানবান সবকিছু সৃষ্টি করেছি পানি থেকে।” ধূ ধূ মরুভূমির মানুষদের কাছে পানি থেকে জীবন সৃষ্টির বিষয়টি ছিল অবিশ্বাস্য; কিন্তু কোরানে তা ই বলা হয়েছে।আধূনিক জীববিদ্যায়ও বলা হয় যে, জীবদেহের ৫০ থেকে ৯০ ভাগই পানি ।

৮/ উদ্ভিদবিদ্যা: কোরানে সূরা তোহায় উদ্ভিদবিদ্যার এক বিস্ময়কর আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছে; বলা হয়েছে, তিনি আকাশ থেকে বারিবর্ষনের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন উদ্ভিদ এবং তাদের জোড়া এবং তারা সকলেই আলাদা আলাদা। আধুনিক বিজ্ঞানও উদ্ভিদের পুরুষ ও স্ত্রী লিংগের ব্যাপারে একমত।

৯/ প্রানীবিদ্যা: সূরা আনামে বলা হয়েছে, তিনি প্রানী ও পাখীকে করেছেন মানুষের মত দলভুক্ত , দলবদ্ধ । একইভাবে প্রানীবিদ্যায় বিজ্ঞানও আবিষ্কার করেছে যে, পৃথিবীর সকল প্রানী এবং পাখী সম্প্রদায়ভুক্ত।

১০/ মৌমাছি এবং পিঁপড়া : সূরা নাহালে মৌমাছির জীবনপ্রনালীর এবং সূরা নামুলে পিঁপড়ার যোগাযোগব্যবস্থার যে বর্ননা রয়েছে তার সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের কোন বৈসাদৃশ নাই।

১১/ মধু বিষয়ক: সূরা নাহালে মধুকে অন্যান্য গুনের পাশাপাশি বিশেষ ঔষধও বলা হয়েছে।একইভাবে বিজ্ঞানও বিশেষ কিছু কারণে মধুকে এনটিসেপটিক হিসেবে উল্লেখ করেছে। মধু যে মৌমাছির পেটের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত হয় সে ব্যাপারে সূরা নাহালে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে।

১২/ শরীরবিদ্যা: সূরা নাহালে জীবদেহে রক্ত সংবহন এবং দুধ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়টি কোরান নাজিলের ৬০০ বছর পরে ইবনে নাফিস প্রথম পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেন। আর তারও ৪০০ বছর পরে উইলিয়াম হার্ভে পৃথিবীকে এই সত্যটি আবারো জানান।

১৩/ ভ্রুণ বিদ্যা: সূরা মুমিনুনে মানব সৃষ্টির যে বিশদ বর্ননা দেওয়া হয়েছে তা আজকের মেডিকেল সায়েনসের ভ্রুণ বিদ্যার সাথে সংগতিপূর্ন ।সেখানে বলা হয়েছে যে, তুচ্ছ শুক্রানু থেকে মানব জন্ম এক অনন্য সৃষ্টি।প্রথমে শুক্রানু, তারপরে জোঁকের মত, তারপরে চিবানো মাংসের মত, তারপরে হাড়গোড় এবং সবশেষে মাংস দিয়ে সেই হাড়গোড় ঢেকে দেওয়ার মাধ্যমে মানবদেহ সৃষ্টি হয়।১৯৮০ সালে টরেন্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের Dr Keith Moore কোরান শরীফে ভ্রুণবিদ্যার এই বিশদ ব্যাখ্যা দেখে স্বীকার করতে বাধ্য হন যে এই সত্য জানা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়; তাই কোরানকে তিনি নি:সন্দেহে আল্লাহর বানী হিসেবে মেনে নেন এবং নবী করিম (স:)কেও আল্লাহর রসুল বলে মেনে নিতে আপত্তি নেই বলে জানান।

১৪/ আংগুলের ছাপ: সূরা কিয়ামায় বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন শুধু হাড়গোড়ই নয় বরং আল্লাহপাক সেদিন প্রতিটি মানুষের আংগুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত একত্র করবেন।১৪০০ বছর আগেই কোরানে বলা হয়েছে যে, একজনের আংগুলের ছাপ আরেকজনের সাথে কখনোই মিলবে না। আধুনিক বিশ্বের সকলেই Finger Printএর এই বিষয়টি জানেন এবং মানেন।১৮৮০ সালে Sir Francis Galton আংগুলের ছাপের এই বিষয়টি আবিষ্কার করেন অথচ কোরানে এই বিষয়টি ১৪০০ বছর আগে থেকেই বিদ্যমান।

দার্শনিক Francis Bacon বলেছেন, বিজ্ঞান সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান একজনকে নাস্তিক বানায়, আর পরিপূর্ন জ্ঞান বানায় এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী।সেইজন্য বর্তমান বিজ্ঞান এক-ঈশ্বর ধারনাকে বাতিল করছে না, বাতিল করছে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে।

আল্লাহপাক আমাদের সঠিকভাবে কোরান পড়ার, জানার এবং মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।

অন্যান্য নির্বাচিত বিজ্ঞান প্রযুক্তি সর্বশেষ