কিংবদন্তি সেতারবাদক  পণ্ডিত রবিশঙ্কর-সুরের আকাশে রবির অবসান

কিংবদন্তি সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর-সুরের আকাশে রবির অবসান

‘৯ দশকব্যাপী এক সঙ্গীতজীবনের চূড়ান্ত উদ্যাপন’  ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোয় ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি সেতারবাদক  পণ্ডিত রবিশঙ্কর।নৃত্যশিল্পী হিসেবে দাদা উদয় শঙ্করের ডান্স ট্রুপের সঙ্গে ১৯৩০-এর প্রথম দিকেই বিদেশের মাটিতে পা ফেলেছিলেন শিশু রবিশঙ্কর। ১৯৩৭ সালে নাচ ছেড়ে আলাউদ্দিন খান-এর কাছে সেতার শিক্ষা শুরু। নিজের প্রথম রাগ সৃষ্টি ১৯৪৫-এ। পঞ্চাশের মাঝামাঝি থেকেই পশ্চিমে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেছেন রবিশঙ্কর। তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমশ দেশের সীমানা ছাড়াতে শুরু করেছে। ঘনিষ্ঠরা বলেন, অনুষ্ঠানের অনুরোধ ফেরাতে চাইতেন না তিনি। চাইতেন না ছুটি।ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে গত ৪ নভেম্বরের অনুষ্ঠানেই শেষ বার প্রকাশ্যে বাজিয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর।তবু গত কাল ছুটি হয়েই গেল তাঁর।হৃদ্যন্ত্র ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরে।

১৯৭১ সাল, মুক্তিযুদ্ধ চলছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। পণ্ডিত রবিশঙ্কর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বজনমত গড়ে তোলা এবং শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য তাঁর শিষ্য-বন্ধু বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের শিল্পী জর্জ হ্যারিসনকে নিয়ে এই অবিস্মরণীয় কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন।

তাঁর বর্ণময় জীবনসাগরে ঢেউয়ের মতো অবিরত আসা নারীদের কথা, তাঁদের সঙ্গপ্রিয়তার কথা রবিশঙ্কর কখনও গোপন করেননি। আত্মজীবনী ‘রাগমালা’-য় লিখেছেন, “নিত্যনতুনের প্রতি একটু ঝোঁক ছিল আমার।”কতকটা রসিকতার ঢঙেই রবিশঙ্কর আত্মজীবনীতে বলেছেন, “আমার মনে হয়, আমি এক এক জায়গায় এক এক জন নারীর প্রেমে পড়েছি। এটা অনেকটা ওই প্রতিটি বন্দরে নাবিকের এক জন করে মহিলা থাকার মতো। আবার আমার ক্ষেত্রে কখনও কখনও একটি জায়গায় একের অধিক নারী।” তাঁদের কেউ নৃত্যশিল্পী, কেউ কনসার্ট প্রোডিউসার কেউ বা অভিনেত্রী।

এক জন শিল্পী, এক জন সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনসঙ্গী হতে গেলে যতটা উদার হতে হয়, তার চেয়েও বেশি উদারতা ছিল সুকন্যার। তাঁর বক্তব্য, “রবিজি তো আর সাধারণ মানুষ নন। উনি পণ্ডিত রবিশঙ্কর। অন্যদের সঙ্গে ওঁকে ভাগ করে নিতে হলে আমার কিছু মনে করা সাজে না।” সুকন্যার কথায়, “যখন ঠিক করলাম ওঁকে বিয়ে করবই, উনি বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু নিজেকে বদলাতে পারব না।  হতে পারে বহু সম্পর্কে জড়িয়েছেন, কিন্তু সে সব তাঁর কাছে সত্যিকার সম্পর্ক ছিল, খেলা ছিল না।”

সম্প্রতি অসুস্থতা বেড়েছিল। লা জোলা-র স্ক্রিপস মেমোরিয়াল হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার তাঁর হৃদ্যন্ত্রের ভাল্ভ প্রতিস্থাপন হয়। অশক্ত শরীর সেই অস্ত্রোপচারের ধকলটাই আর সামলাতে পারল না। রবিশঙ্করের জীবনাবসান হয় হাসপাতালেই।

বিনোদন