ঋণের ৭ শ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গাংনীতে ডিবি পুলিশের নির্মম নির্যাতনে পঙ্গু হতে চলেছে ২ দিনমজুর

ঋণের ৭ শ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গাংনীতে ডিবি পুলিশের নির্মম নির্যাতনে পঙ্গু হতে চলেছে ২ দিনমজুর

imgresআমাদের মেহেরপুর ডট কম ঃ মেহেরপুর ডিবি পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু হতে চলেছে আবজেল হোসেন (৫০) ও নজরুল ইসলাম (৪০) নামের ২ দিন মজুর। মঙ্গলবার রাতে এদেরকে নিজ বাড়ি গাংনী উপজেলার রাইপুর গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। দারিদ্র বিমোচন নামের একটি সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে আটক করে নির্যাতন শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিলে মুমুর্ষ অবস্থায় তাদেরকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন জানান, আহতদের শারিরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এদের উন্নত চিকিৎসা জরুরী। নতুবা পঙ্গু হতে পারেন দু’জনই। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে এ নির্যাতনের প্রতিবাদে এলাকাবাসি দারিদ্র বিমোচন সংস্থার গাংনী অফিস ঘেরাও করে রাখে। পরে গাংনী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। নির্যাতনের শিকার আবজেল হোসেন জানান, তারা বছর পাঁচেক আগে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান কারী সংস্থা দারিদ্র বিমোচন থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিই। কিস্তির মাত্র ৭ শ টাকা বাকি থাকা অবস্থায় কেউ টাকা না নিতে আসায় টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বর্তমানে সুদাসলে টাকার পরিমান দাড়িয়েছে ১৬ হাজার টাকায়। এ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মেহেরপুর ডিবি পুলিশকে জানালে মঙ্গলবার রাতে ডিবি পুলিশের ওসি আকবর আলী ও সঙ্গীয় ফোর্স আমাকে, প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম ও আজগর আলীকে আটক করে । পুলিশের লোকজন গাড়িতে উঠিয়ে সবাইকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। বিদেশী টর্চ লাইট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে মেহেরপুর সদর থানার অভ্যন্তরে নিয়ে ২/৩ জন মিলে পেটাতে থাকে। এসময় তারা অশ্রাব্য ভাষাতেও গালিগালাজ করে। ওই রাতেই গ্রামের বাড়ি থেকে লোকজন এসে সমুদয় টাকা পরিশোধ করলে মুচলেকা নিয়ে ডিবি অফিস থেকে ছেড়ে দেয়। আহত নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ তাদেরকে পিঠমোড়া দিয়ে বেধে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পেটাতে থাকে। চিৎকার দেয়ার পর তাদের মুখ বেধে ফেলা হয়। তারা বলে যে, আর কখনও ঋণ খেলাপি হবে কি না। পুলিশ ঋণের ৮ হাজার টাকা নিয়ে মুচলেকা নেয়। একই ভাবে আজগর আলীর কাছ থেকেও নেয়া হয় আড়াই হাজার টাকা।রাইপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ডিবি পুলিশ যখন এদেরকে আটক করে তখন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ডিবি পুলিশের লোকজন তাদেরকে জন সম্মুখে পেটাতে পেটাতে গাড়িতে ওঠাচ্ছে। সেসময় মহিলারা কাকুতি মিনতি করলে তাদেরকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে। মঙ্গলবার রাতেই আটককৃত ৩ জনকে ছাড়িয়ে এনে দু’জনকে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।রায়পুর গ্রামের গৃহবধূ জোসনা খাতুনসহ অনেকেই জানান, ডিবি পুলিশ এ সংস্থায় এসে বিভিন্ন স্থানে ঋণের কিস্তি আদায় করে থাকে। এলাকার গ্রাহকগণকেও নানা ধরনের হুমকি ধামকি প্রদান করে ও খারাপ ভাষায় গালমন্দ করে।মেহেরপুর ডিবি পুলিশের ওসি আকবর আলী জানান, যা করা হয়েছে তা পুলিশ সুপারের নির্দেশে করা হয়েছে। এতে আমার কোন হাত নেই। মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোফাজ্জেল হোসেন জানান, দারিদ্র বিমোচন সংস্থার নির্বাহি পরিচালকের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি দেখার জন্য ডিবি পুলিশকে বলেছিলাম মাত্র। কিন্তু ওরা কি করেছে তা জানা নেই। বিষয়টি দেখা হবে। দারিদ্র বিমোচন সংস্থার নির্বাহি পরিচালক ডা. জাফর জানান, এরা ঋণ খেলাপি হওয়া টাকা আদায়ের জন্য মেহেরপুর পুলিশ সুপারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে মাত্র। আর এভাবে পুলিশের সহায়তা না নিলে টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না।
মেহেরপুর সংবাদ